ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সালিশে দম্পতি গ্রামছাড়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২২ অক্টোবর ২০১৬

সালিশে দম্পতি গ্রামছাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২১ অক্টোবর ॥ মান্দায় আপত্তিকর ঘটনার অভিযোগে আটক করে এক যুবকের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। ঘটনায় ওই ইউনিয়নের আন্দারিয়াপাড়া গ্রামের এক দম্পতিকে গ্রামছাড়া করারও অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ৫শ’ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ওই দম্পতিকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করেছে চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী। স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা আন্দারিয়াপাড়া গ্রামে এক গৃহবধূর ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় রেজাউল ইসলাম নামে এক যুবককে আটক করে। আটক রেজাউল ইসলাম উপজেলার নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নের বারিল্যা গ্রামের হুরমত আলীর ছেলে। তাকে মারপিটের পর রাত ১২টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান গ্রামপুলিশ সামশুদ্দীন ও ইয়াদ আলীর মাধ্যমে ধরে নিয়ে রেজাউলকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে এ নিয়ে সালিশের আয়োজন করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সালিশে সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম ও আফসার আলী শাহ, নূরুল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম, আহসান হাবীব ও তোফাজ্জল হোসেন, মাতবর আবু বাক্কার, আলমগীর হোসেন আলমসহ এলাকার অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ব্যক্তিরা জানান, সালিশে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে রেজাউল ইসলামের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন, আবুল কালাম আজাদ, ইসমাইল হোসেন, আলিমুদ্দীন শেখ, আবুল কাসেমসহ আরও অনেকে জানান, বাদীর অভিযোগ ছাড়াই চেয়ারম্যান একতরফা সালিশ করে রেজাউল ইসলামের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। অন্যদিকে ঘটনার শিকার গৃহবধূ ও তার স্বামীর সই-স্বাক্ষর নিয়ে তাদের অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী। যাওয়ার সময় তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে মাত্র ৫শ’ টাকা। ভিকটিম ওই গৃহবধূ জানান, আত্মীয়তার সূত্র ধরে বুধবার সন্ধ্যায় রেজাউল ইসলাম তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রাতে বিছানা করে দেয়ার সময় প্রতিবেশীরা সন্দেহের বশে তাদের আটক করে মারপিট করে। তাদের অনৈতিক সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন ওই গৃহবধূ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই রাতেই চেয়ারম্যান ও তার লোকজন বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এ সময় তার হাতে পথ খরচ ৫শ’ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। সালিশ বৈঠকে আদায় করা টাকা তাদের দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। নিরাপত্তার অভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি বলেও জানান ঘটনার শিকার ওই দম্পতি। ওই দম্পতিকে হুমকি দিয়ে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, গ্রাম্য আদালতের ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করার এখতিয়ার রয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ চেষ্টার কোন ঘটনায় দ--জরিমানা করার এখতিয়ার গ্রাম্য আদালতের নেই। ঘটনায় এজাহার পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×