বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোন দেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা বা কল্পনা করা যায় না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক যে প্রত্যাশা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, বাস্তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ থেকে দূরত্ব দূরে অবস্থান করছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলো নিয়ে ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। কেবল নামেই এই সংগঠন নয়, বরং প্রকৃত অর্থেই একটি কার্যকর আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠছে। এই সাত জাতি সংস্থার স্থায়ী সচিবালয় ঢাকায় হওয়ার কারণে এই সংস্থা নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ অত্যধিক। অপরদিকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস হয়েই উদীয়মান জাতীয় অর্থনীতির একটি সংস্থা। অন্তর্ভুক্ত সব রাষ্ট্র উন্নয়নশীল অথবা সদ্য শিল্পোন্নত। কিন্তু তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব। পাঁচটি রাষ্ট্রই আবার জি-২০ এর সদস্য। ব্রিকসের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ। সম্মিলিত জিডিপি ষোলো দশমিক শূন্য ঊনচল্লিশ ট্রিলিয়ন। যা মোট বিশ্বপণ্যের প্রায় ২০ শতাংশের সমতুল্য এবং মার্কিন মিলিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের আনুমানিক চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালের সমন্বয়ে গঠিত বিমসটেক অঞ্চলে দেড় শ’ কোটি মানুষের বসবাস, যা বিশ্ব জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশ। অথচ বিশ্বের সম্পদ ভোগের ক্ষেত্রে এরা অনেক পিছিয়ে। কাজেই এই বিপুল জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে নিজেদেরই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে সদস্য দেশগুলো। এমনিতে সহযোগিতার জন্য চৌদ্দটি ক্ষেত্রে চিহ্নিত রয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দেশগুলোর বর্তমান আগ্রহ অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিমসটেকের বাস্তব অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে বলে ধারণা করা যায়।
ব্রিকস-বিমসটেক যুগলবন্দীর প্রকাশ্য ও ঘোষিত লক্ষ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সার্বিক সহযোগিতা। পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের প্রধান সমস্যা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার অঙ্গীকারও রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এ দুটি সংস্থার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা জরুরী। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাও সামনে এসেছে। তাই এই দেশগুলোর মেলবন্ধন জরুরী। আরব সাগরের তীরে ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত দুটি সংস্থার সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দুটি সংস্থারই সদস্য ভারত ও চীন। এ জন্য কানেক্টিভিটি, আঞ্চলিক-উপআঞ্চলিক সহযোগিতা এবং তার মাধ্যমে বৈষম্য দূর করার জন্য দুটি সংস্থা একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। ফলে এসব দেশের মধ্যে সংযোগ আরও বাড়বে। তেমনি অর্থনৈতিক, কারিগরি ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, এটা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। দুটি সংস্থার মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি হলে লাভবান হবে বাংলাদেশও। তাই শেখ হাসিনা সহযোগিতার জন্য পারস্পরিক সম্ভাব্যতা ও যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণের কথা বলেছেন এবং পরামর্শও দিয়েছেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নে এ দুটি সংস্থা আরও সক্রিয় হলে এ অঞ্চলের জনগণ অগ্রগতির সোপানে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সংস্থাদ্বয়ের নেতৃবৃন্দ জনগণের সেই আকাক্সক্ষা পূরণে এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা।