ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোই ঘুরিয়ে দিতে পারে জীবনের মোড়

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

আলোই ঘুরিয়ে দিতে পারে জীবনের মোড়

পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভাল ফলাফলে আলো ফেলতে পারে কার্যকরী ভূমিকা। আর ঠিক যেমনটা দরকার, সেই রকম আলো না পেলে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতটা হয়ে যেতে পারে একেবারেই অন্ধকার। কারণ, কার কেমন মেধা, কার কতটা যোগ্যতা, বিতর্ক থাকলেও, তা মাপার একমাত্র ‘হাতিয়ার’ পরীক্ষার মার্কশিট প্রায় সব ক্ষেত্রেই। আর সেই মার্কশিটকে ‘মার্কস’ দিতে পারে ক্লাসরুম ও পরীক্ষার ঘরের যথাযথ আলো। সম্প্রতি একটি গবেষণার এই সাড়া জাগানো ফলাফল গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। একেবারে আলোর কম্পাঙ্ক আর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য মেপে-মেপে দেখিয়ে দিয়েছে, স্কুল, কলেজের পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে হলে কোন আলোর মাঝে ক্লাস করা উচিত। কোন আলোয় ইন্ডোর গেমস খেলা ভাল স্কুল, কলেজের ছেলে-মেয়েদের। সাড়া জাগানো গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অপটিক এক্সপ্রেস’-এ। যার অন্যতম সহযোগী গবেষক এক জন বাঙালী পদার্থবিজ্ঞানী। যার নামেও রয়েছে আলো। আলোকণা মুখোপাধ্যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কোরিয়া এ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির আলোকবিদ্যার (অপটিক্স) এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। কোন আলো রোমান্সের আবহ গড়ে তোলে, কোন আলো আমাদের শরীর ও মনের উদ্দীপনা বাড়ায়, এতদিন এ ব্যাপারে আমাদের কিছু প্রাথমিক ধারণা ছিল। গবেষকদের অভিনবত্ব, তাঁরা দেখালেন, ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিটে আলো ফেলে কোন আলো। মূল গবেষক ‘কোরিয়া এ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি’র আলোকবিদ্যার (অপটিক্স) প্রফেসর, বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী হেয়ং-জিয়ং সুক তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘আমরা দেখেছি, ডায়নামিক এলইডি আলোতেই ক্লাসরুমে বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। মুখস্থ করতে পারে তাড়াতাড়ি। পড়াটা মনে রাখতে পারে বেশি সময় ধরে। সাধারণ সূর্যালোক বা স্কুল, কলেজের স্বাভাবিক আলোয় যা অতটা সহজে হয় না।’ ক্লাসরুমে বা পরীক্ষার হলে যথাযথ আলো যে আলো ফেলতে পারে ছাত্রছাত্রীদের পারফর্মেন্সে, সে ব্যাপারে কীভাবে নিশ্চিত হলেন গবেষকরা? কয়েক পরীক্ষার ফলাফলে ৫৪ ছাত্রছাত্রীরই অঙ্কের মার্কস বেশ ভাল ছিল। ওদের পরীক্ষায় বসানো হয়েছিল দুটি ঘরে। একটি ঘরে ছিল ‘ডায়নামিক এলইডি লাইট’। পরীক্ষার অন্য হলটি আলোকিত করা ছিল ফ্লুরোসেন্ট আলোয়। ওই এলইডি আলোকে বিভিন্ন তাপমাত্রায় নানা রকমের আলোয় বদলে নেয়া যায়। তাই তাকে বলা হয় ‘ডায়নামিক এলইডি লাইট’। আর সেটা যে পদ্ধতিতে করা হয়, তার নাম ‘ কারিলেটেড কালার টেম্পারেচার (সিসিটি)। ওই লাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন হাজার ডিগ্রী কেলভিন তাপমাত্রার আলোকে বলা হয় ‘গরম’ আলো। যা দেখতে হয় হলদেটে সাদা। মাঝারি মানের আলোর তাপমাত্রা ৫ হাজার ডিগ্রী কেলভিন। এটাকে বলা হয় ‘নিউট্রাল’ আলো। আর সাড়ে ৬ হাজার ডিগ্রী কেলভিনের আলোকে বলা হয় ‘ঠা-া’ আলো। যা দেখতে নীলাভ সাদা। অনেকটা সূর্যালোকের মতো। কিন্তু পুরোপুরি সূর্যালোক নয়। আমরা দেখেছি, পরীক্ষার যে হলে এলইডি আলো ছিল, সেখানকার ছাত্রছাত্রীরাই ভুল না করার ব্যাপারে বেশি সতর্ক ছিল। তারাই অঙ্কে বেশি মার্কস পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার মার্কশিট সবচেয়ে ভাল হয়েছে, যখন তারা পরীক্ষা দিয়েছে সাড়ে ৬ হাজার ডিগ্রী কেলভিন তাপমাত্রার এলইডি আলোয়। নীলাভ সাদা আলোয়। ক্লাসরুমে পড়ায় মনোযোগ আর তাড়াতাড়ি মুখস্থ করা ও তা বেশিক্ষণ মনে রাখার ক্ষেত্রেও নীলাভ সাদা আলোই বড় ভূমিকা নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, পিরিয়ডের অবসরে ছাত্রছাত্রীরা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হলদেটে সাদা এলইডি আলোয়। মানে সাড়ে তিন হাজার ডিগ্রী কেলভিন তাপমাত্রার আলো। শুধুই লিখিত পরীক্ষা নয়, পরে নেয়া ছাত্রছাত্রীদের মৌখিক পরীক্ষাতেও গবেষণার ফলাফলের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। ক্লাসে রোজ পড়াশোনার জন্য ৫ হাজার ডিগ্রী কেলভিনের এলইডি আলোই সবচেয়ে ভাল। সেরা।’ সূত্র: আনন্দবাজার
×