ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শহিদুল ইসলাম

জেগে উঠুক তারুণ্য আত্মবিশ্বাসে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১১ অক্টোবর ২০১৬

জেগে উঠুক তারুণ্য আত্মবিশ্বাসে

বর্তমান সময় প্রতিযোগিতার সময়। এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে, উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কারণ পৃথিবীর সমস্ত কর্মের সফলতার পেছনে রয়েছে আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় মানসিক শক্তি। আত্মবিশ্বাস এমন কোন বিষয় নয়, যা রাতারাতি অর্জন করা যায়। দীর্ঘদিনের চর্চা এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একজন মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। অনেকেই আছেন। যারা ছোট-বড় যে কোন কাজ করতে গেলেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। এমনকি সঠিক সিদ্ধান্ত তারা কখনও নিতেও পারেন না। এর কারণ হলো তাদের মনোবল দুর্বল বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। এই আত্মবিশ্বাসহীন মানুষগুলো না পারে নিজে ভাল থাকতে, না পারে কাউকে ভাল রাখতে। এসব আত্মবিশ্বাসহীন, দুর্বল মনের ব্যক্তিদেরই বলছি। কিছু কৌশল চর্চার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে নিন। *সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তারপর বলুন : কেউ যখন আপনাকে কোন কথা বলবে তখন আপনি তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং কথার আগে পরের সব বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। তার কথা বলার মাঝখানে কোন কথা বলবেন না। আপনি যখন কারও কথা মন দিয়ে শুনবেন তখন সে আপনার প্রতি আগ্রহী হবে এবং আপনাকে গুরুত্ব দেবে। যখন আপনাকে কেউ গুরুত্ব দেবে তখন আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। * নিজের আগ্রহের বা জানা বিষয় নিয়ে বেশি কাজ করুন : যে মানুষ যে বিষয়ে বেশি আগ্রহী, সে মানুষ তা করলে এমনিতেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেউ কোন কাজে সফল হলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তাই আগ্রহের বিষয় নিয়েই বেশি কাজ করুন। *অন্যদের বেশি বেশি সাহায্য করুন : অন্যদের কাজে সাহায্য করার মানসিকতা নিজের ভেতর গড়ুন। কারণ অন্যকে সাহায্য করলে, কোন সেবামূলক কাজ করলে মানসিক তৃপ্তি আসে। নিজের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। নিজেকে সম্মানিত মনে হয়। আপনি যখন নিজেকে সম্মান করবেন তখন আনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। *ক্ষতিকর মানুষদের সঙ্গ ত্যাগ করুন : কিছু মানুষ আছে। যারা সব সময় সব কিছুতেই নেগেটিভ। এই নেগেটিভ মানুষগুলো অন্যর ভাল কাজের প্রশংসা করতে পারে না। উৎসাহিত করতে পারে না। এই মানুষগুলো সর্বদাই নিজের অবস্থান থেকে অন্যকে বিচার করে এবং সব কিছুই নিজের মতো করে পেতে চায়। এই মানুষগুলো অন্যের মনোবল ভেঙ্গে দেয়। তাই, এসব নেগেটিভ মানসিকতার মানুষগুলোকে এড়িয়ে চলুন। হোক সে কাজের বন্ধু, সহকর্মী। *নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যাশা করুন : আপনি সেই কাজ কখন করতে যাবেন না যে কাজ করার যথেষ্ট যোগ্যতা আপনার নেই। কারণ নিজ যোগ্যতার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিলে আপনি সেই কাজে সফল হতে পারবেন না। এতে আপনি হীনম্মন্যতায় ভুগবেন। তাই, আগে নিজেকে জানুন এবং প্রত্যাশা করুন ততটুকু। ঠিক আপনি যতটুকুর যোগ্য। এতে যা হবে, আপনি কাজে সফল হবেন। ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। *কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন : ছোট-বড় সব কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞরা প্রকাশে আপনার বড় মনের পরিচয় প্রকাশ পাবে। মানুষ আপনার প্রশংসা করবে। অন্যের প্রশংসা পেয়ে আপনার মন ভাল থাকবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। *আদর্শ সঙ্গী বাছাই করুন : জীবনে চলার পথে অনেকের সঙ্গেই মিশতে হয়। সেই ক্ষেত্রে আদর্শ সঙ্গী বাছাইয়ে সতর্ক থাকুন। কিছু মানুষ আছে যারা সর্বদা নেতিবাচক কথা বলবে। আপনার ভাল কাজে বাধা দেবে। এভাবে চলতে থাকলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। তাই আপনি তাদের সঙ্গেই সঙ্গ দিন যারা আপনাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করে। *কাজের আগেই প্রস্তুতি নিন : যে কোন কাজ করার আগে প্রস্তুতি নিলে সেই কাজের সফলতা পাওয়া যায়। তাই কাজ করার আগে তা বেশি বেশি অনুশীলন করুন। তাছাড়া অভিজ্ঞতা সে কাজে যত বেশি হবে, সে কাজে তত সফল হওয়া যাবে। আর কাজে সফল হওয়া মানেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়া। *নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন : ‘সাইকোলজিস্ট জনাথন ফ্রিডম্যান’ বলেন, যে মানুষের নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে এবং যিনি নিজের জন্য লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে পারেন তিনি বর্তমান ও ভবিষ্যত সব ক্ষেত্রেই সুখী হতে পারেন। ইউনিভার্সিটি অব ওরিসকনসিনের নিউরোসায়েন্টিস্ট রিচার্ড তার গবেষণায় পান যারা নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য স্থির করে সেই অনুযায়ী কাজ করেন। তারা জীবনে সুখী ও সফল হন। *সৃষ্টিকর্তার কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করুন : ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ব্রুস হেইডে গবেষণায় দেখতে পান ২৫ বছর বয়সের মানুষদের মধ্যে তারাই বেশি সুখী যারা নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। *আত্মকেন্দ্রিক হওয়া থেকে বিরত থাকুন : আত্মকেন্দ্রিক লোক সর্বদা নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিজের স্বার্থমতো কিছু না হলেই সে নিজেকে খুব হতাশাগ্রস্ত মানুষ ভাবতে থাকে। তাই বেশি বেশি ভোগের আশা না করে ত্যাগের অভ্যাস করুন। কারণ প্রবাদ বলে, ভোগে সুখ নেই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। আরও যে কাজগুলো আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা, নতুন কিছু করা, সফলতা না আসা পর্যন্ত চেষ্টা করা। নিজের ওপর আস্থা রাখা, সব জায়গায় বিশ্বস্ত থাকা, বেশি বেশি বই পড়া, বদ অভ্যাস ত্যাগ করা, সব কিছু মানিয়ে নেয়া, পরিস্থিতি বুঝে কাজ করা ও কথা বলা, অন্যের সঙ্গে কথা ভঙ্গ না করা, শেখার আগ্রহ তৈরি করা, পরিবর্তন হওয়া, উদার মনমানসিকতা, গিবত না করা, অন্যের সঙ্গে তুলনা না করা এবং অল্পতেই সন্তুষ্টি থাকা। সবশেষে নিজেকে যদি আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়তে চান তাহলে আজ থেকে বদলে ফেলুন নিজেকে। কারণ, সকল কাজের সফলতার মূলমন্ত্র হলো আত্মবিশ্বাস।
×