ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া পরীক্ষার্থী ও প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ অক্টোবর ২০১৬

ভুয়া পরীক্ষার্থী ও প্রযুক্তি

জনকণ্ঠের প্রতিবেদনই সত্য প্রমাণিত হলো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে শুক্রবার সারাদেশে অনুষ্ঠিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় নকলের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। হাতেনাতে গ্রেফতারসহ জেল-জরিমানার খবরও আছে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ৭ অক্টোবর জনকণ্ঠে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ‘প্রশ্নফাঁস চক্র চিহ্নিত’ শিরোনামে এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। এতে আগাম বলে দেয়া হয়েছিল যে, এই নিয়োগ পরীক্ষায় মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত প্রশ্নপত্র বের করে দ্রুত সমাধান শেষে কেন্দ্রে উত্তর সরবরাহ করার ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য ব্যবহার করা হবে এটিএম সদৃশ মাস্টার কার্ড ও বিশেষ ধরনের ব্লুটুথ হেয়ারিং ডিভাইস। এর ফলে একজন পরীক্ষার্থী খুব সহজেই উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পরীক্ষার হলে বসেই লিখে দিতে পারবে উত্তরপত্র। পাশাপাশি ভুয়া পরীক্ষার্থী তো ছিলই। রাজধানী ঢাকার ১৩টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২০ হাজার ৯৩৫ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫ ভুয়া পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত করা হয়। এ ছাড়া উন্নত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার ও ব্যবহারকারীর সহায়তার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করে সোপর্দ করা হয় র‌্যাবের কাছে। এদের শরীর তল্লাশি করে পাওয়া গেছে সর্বাধুনিক মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ। আর কানে ছিল ক্ষুদ্র একটি হেয়ারিং এইড, যা দিয়ে শোনা যায়। ভুয়া পরীক্ষার্থী এবং অভিনব নকলকারীদের পেছনে যে দেশব্যাপী সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এর পেছনে যে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, তাও দিবালোকের মতো সত্য। কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষায় নকলের অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের বরাতে জানা গেছে, গত বছর ৪২ ভুয়া পরীক্ষার্থী ও নকল করা প্রার্থীকে আটক করা হয়েছিল। সেই হিসেবে ভুয়া পরীক্ষার্থী ও নকলের অভিযোগ কমলেও সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে নকলের অভিযোগটি সম্ভবত নতুন। এও তো হতে পারে যে, ধৃতদের বাইরেও রয়েছে ভুয়া পরীক্ষার্থী ও নকলবাজ, যারা ধরা তো পড়েইনি, উপরন্তু সফলকাম হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বাঁকা পথে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেই সে অনিবার্য বেছে নেবে দুর্নীতি ও অনিয়মের পথ। তাদের কাছ থেকে নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানই বা কী পাবে আর তারা দেশ সেবাই বা করবে কতটুকু? আরও যা দুঃখজনক ও মর্মান্তিক তা হলো, কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই দুষ্টচক্রের সঙ্গে জড়িত। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় সর্বত্রই প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ উত্তরপত্র সরবরাহ, ভুয়া পরীক্ষার্থী ও নকলের অভিযোগ আছে। মেডিক্যাল ও প্রকৌশলে ভর্তিও এর বাইরে নয়। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায়ও এসব ঘটছে দেদার। এতে একদিকে যেমন সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পড়ছে বেকায়দায় তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নিয়োগ কার্যক্রম। অযোগ্য-মেধাহীনরা নিয়োগ পাচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে, অন্যদিকে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এদের পেছনে সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ইন্ধন থাকাও বিচিত্র নয়। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এরা ঘাপটি মেরে রয়েছে। এদের বিষদাঁত যেকোন মূল্যে সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম হবে প্রশ্নবিদ্ধ। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উচিত হবে আরও তৎপর ও কঠোর হওয়া।
×