ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বছরের বিজয় দিবসে জাতিকে আরেকটি বিজয় উপহার

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হবে ’১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ অক্টোবর ২০১৬

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হবে ’১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর

ফিরোজ মান্না ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। জাতিকে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে আরও একটি বিজয় উপহার দেয়া হবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে উপগ্রহ যুগে ওই দিন থেকেই বাংলাদেশ পথ চলবে। দেশের নিজস্ব এই উপগ্রহ স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। ব্রডকাস্টিং থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগের সব সেক্টরই বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তখন আর বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর আমাদের নির্ভরশীল হতে হবে না। অন্যদিকে স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হবে। বিটিআরসি ২০০৮ সালে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আইটিইউর কাছে ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং দাখিলসহ প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করেছিল। দীর্ঘপথ পার হয়ে এখন নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সম্প্রতি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য সেক্টর উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাবে। স্যাটেলাইটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমরা এই প্রকল্পটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর কার্যক্রম শুরু করলে আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেম (৪০ ট্র্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্র্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড) এর গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তিনি স্যাটেলাইট যথাসময়ে নির্মাণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে শেষ করতেও বলেছেন। কাজে বিলম্ব হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাবে। তাই কাজ সময় মতোই শেষ করতে হবে। কোন প্রকার অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি ত্বরান্বিত ও জনবল নিয়োগসহ নানা বিষয়ে খোঁজ খবর নেন তিনি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আত্ততাধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট তেরোটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর মধ্যে স্যাটেলাইট প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে। ইতোমধ্যে মহাকাশে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে অর্থায়নে হংকং সাংহাই ব্যাংক কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে বিটিআরসির ঋণচুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকার ঋণ চুক্তিতে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও এইচএসবিসি বাংলাদেশের ডেপুটি সিইও মাহবুর উর রহমান স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, এইচএসবিসি বাংলাদেশের কাছ থেকে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ ইউরো ঋণ নিয়ে স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়, স্যাটেলাইট নির্মাণ ও গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজে ব্যয় করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প হাতে নেয়ার দুই বছরের বেশি সময় পর ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এখান থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনা হচ্ছে ফ্রান্স থেকে। আর বাংলাদেশকে ‘অরবিটাল সøট’ ইজারা দিচ্ছে রাশিয়া। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম উপস্থিতি ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ আমাদের একটি গৌরবের প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি কাজ শেষ হবে। এজন্য সব ধরনের কাজ করে যাওয়া হচ্ছে। এইচএসবিসির এক হাজার ৪শ’ কোটি টাকা বা ১৬৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো ঋণ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। এর আগে গত বছরের ১১ নবেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রধান কার্যক্রম স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ের জন্য এক হাজার ৯শ’ ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিটিআরসি। সূত্র মতে, গত বছরের ২০ অক্টোবর সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থ্যালেস স্পেসকে কাজ দেয়ার অনুমোদন দেয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯শ’ ৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ৬শ’ ৫২ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সংকুলান করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য গত ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল সøট লিজের ভিত্তিতে কেনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে ই-সেবা নিশ্চিত করাসহ স্পেস টেকনোলজির জ্ঞানসমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনেও অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হচ্ছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন হলে এই টাকা সাশ্রয় হয়েও আর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
×