ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ কাহিনী

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০১৬

ইলিশ কাহিনী

‘ভাজা ইলিশের গন্ধে গলি থেকে কিছুতেই নড়তে চায় না হাওয়া/বুড়োরা গিয়েছে পার্কে খিদে করতে ...’ ইত্যাদি। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার একটি লাইনে ধরা পড়েছে ভাজা ইলিশের অতি রুচিকর খিদে-উদ্রেক করা বর্ণনা! মাছ সম্পর্কে কবি ঈশ্বর গুপ্ত ‘তপসে’ মাছের গুণ কীর্তন করেছেন। কিন্তু ইলিশ যে কেন তার চোখে পড়েনি সেটা ভাববার বিষয়। ইলিশ চোখে পড়েছে কবি বুদ্ধদেব বসুর। তিনি এই মৎস্যটিকে বলেছেন ‘জলের রুপালি শস্য’। সেই ইলিশই যুগ যুগ ধরে এদেশের মানুষের রসনা তৃপ্ত করছে। এদেশের অগণিত মানুষ এই মৎস্যটি আহরণে বংশ পরম্পরায় কাজ করে চলেছে এবং এই মৎস্যটি দেশের রফতানি খাতে বেশ খানিকটা ভূমিকাও রাখছে। এবারের সবচেয়ে বড় খবর বাজারে উঠেছে প্রচুর ইলিশ। কিছুদিন আগেও এই মাছটি ছিল সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে অর্থাৎ দামের জন্য কেনা ছিল প্রায় অসম্ভব। কারণ কিছুকাল ইলিশ ধরা পড়েছে কম, বাজারে উঠেছেও কম। এবার আনন্দের তথা বিস্ময়ের কথা হলো বাজার যেন ইলিশে সয়লাব। মোটামুটি সাইজও ভাল, দামও অনেক কম। সাধারণের হাতের নাগালে। ধানের জমিতে ঠিক বাম্পার ফলনের মতোই যেন ‘জলে রুপালি শস্যের এবার হয়েছে বাম্পার ফলন’। জানা যাচ্ছে, সমুদ্র উপকূলে এ মাছের আহরণ এবার কয়েক বছরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে কোথাও কোথাও মাছ রাখার জায়গা না পেয়ে জেলেরা বা আড়তদাররা ফেলেও দিচ্ছে। তারপরও যা কিছু হোক না কেন দেশের মানুষ এবার বেজায় খুশি। গতবারের তুলনায় এবারের ইলিশের দাম অনেক কম। তাই ঘরে ঘরে এখন ইলিশ রান্নার ধুম। কেউ করছেন পাতুরি, কেউ করছেন সর্ষে ইলিশ, কেউ করছেন ইলিশ পোলাও। এদেশের হেঁসেলে হেঁসেলে, গৃহিণীদের মুখে হাসি, কর্তারা ইলিশ খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। ইলিশ পেয়ে আমরা খুশি, তৃপ্ত। আমাদের এই ইলিশের কদর শুধু আমাদের দেশেই নয়, রয়েছে অন্যান্য দেশেও। বিশেষ করে যে সব দেশে বাঙালী রয়েছে। তবে আমাদের এই ইলিশের জন্য বিশেষ আগ্রহ রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিম বাংলায়। পশ্চিম বাংলার লোক যেন ব্যাকুল হয়ে থাকে বাংলাদেশের ইলিশের জন্য। রফতানি মারফত এ দেশের ইলিশ ওদেশে গেলে লোকজন স্বাভাবিকভাবেই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে বাজারে। তারপর ইলিশ কিনে খেয়ে চলে গৃহিণীদের খোশ গল্প। ইলিশ যে এবার বেশি ধরা পড়ছে তার কারণ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। গতবার জাটকা ধরা নিষিদ্ধ ছিল কিছুদিন। তাতে ভাল কাজ হয়েছে। সরকারী নিষেধাজ্ঞা দু’একটি ক্ষেত্রে অমান্য করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মেনে চলা হয়েছে। এবারও নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী বারো তারিখ হতে কার্যকর হবে। এবারও যদি কঠোরভাবে জাটকা নিধন বন্ধ করা যায়, তাহলে ফল সামনের বছর আরও ভাল পাওয়া যাবে। এখন কর্তৃপক্ষকে সেই চেষ্টাই করতে হবে। একই সঙ্গে ইলিশ অধিক সংখ্যায় ধরা পড়ার পরও যাতে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা না হয়, যাতে কোন ইলিশ নষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করতে পারলে দেশের মানুষ আগামীতেও আরও কম দামে ইলিশ কিনতে পারবে। আমাদের এ খাতে রফতানি আয় অনেক বেড়ে যাবে। মানুষ তখন আরও কম দামে বেশি করে কিনতে পারবে তাদের প্রিয় এই মৎস্যটি তখনই হবে সত্যিকার ইলিশোৎসব।
×