ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টকার্ড বিতরণ রমনা, উত্তরায়

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ অক্টোবর ২০১৬

স্মার্টকার্ড বিতরণ রমনা, উত্তরায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে স্মার্টকার্ড পেয়ে সবাই খুশি। সোমবার সকালে রাজধানীর বেইলী রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ক্যাম্পে স্মার্টকার্ড নিতে এসে অনেকেই তাদের আনন্দের কথা প্রকাশ করে বলেন সরকার আমাদের জন্য স্মার্টকার্ডের ব্যবস্থা করেছে। এটা পেয়ে আনন্দ প্রকাশ না করার কোন কারণ নেই। তারা বলেন, শুনেছি উন্নতমানের এই স্মার্টকার্ড কেউ নকল করতে পারবে না। এতে নাগরিকদের তথ্যসমৃদ্ধ থাকবে। সরকার একটা ভাল কাজ করেছে। তবে লোকবল সঙ্কট যান্ত্রিক ত্রুটি, আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় এবং কার্ড বিতরণের সময় ও স্থান সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকে কার্ড সংগ্রহ করতে এসে ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। আবার একসঙ্গে অনেকে ভিড় করায় কার্ড বিতরণে সংশ্লিষ্টদের হিমশিমও খেতে হয়েছে। সোমবার রাজধানীর রমনা থানা ও উত্তরা থানার আংশিক এলাকায় কার্ড বিতরণের নির্ধারিত সময়সূচী থাকলেও এর বাইরেও অনেকে কার্ড সংগ্রহের জন্য ভিড় করে। ভিড়ের কারণে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ ও চোখের আইরিশের ছবি নেয়ার পর কার্ড দেয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় ২০ মিনিট। আবার আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে অনেককে। জানা গেছে সফটওয়্যারের ত্রুটি থাকায় অনেকের আইডিতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে অনেককে কার্ড না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। ফলে স্মার্টকার্ড বিতরণের প্রথম দিনে যারা কাক্সিক্ষত কার্ড হাতে পেয়েছে তারা যেমন খুশিতে উৎফুল্ল ছিলেন, পাশাপাশি যারা কার্ড পাননি তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সারাদেশে স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর সোমবার থেকে সাধারণ নাগরিকদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ বেইলী রোড, কাকরাইলের রমনা থানার অংশ এবং ডিআইটি কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়। এছাড়াও উত্তরা থানার ১ ও ২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দাদের মাঝে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়। রমনা থানায় সকাল নয়টা থেকে কার্ড বিতরণ শুরু হলেও উত্তরায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কার্ড বিতরণ বিলম্বে শুরু হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে কুড়িগ্রামে দাসিয়ারছড়ায় সাবেক ছিটমহলবাসীদের মাঝে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয় এদিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাসিয়ারছড়ায় কার্ড বিতরণ উদ্বোধন করেন। তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, প্রথমদিনের বিতরণ ব্যবস্থায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা ছিল। আগামী দিন থেকে এসব অব্যবস্থাপনা আর থাকবে না। ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিসার শাহ আলম বলেন, প্রথম দিন স্মার্টকার্ড বিতরণ ব্যবস্থায় কিছুটা অব্যবস্থা ছিল সেটা আমাদের নজরে এসেছে। আগামী দিন থেকে এগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। সরেজমিন বেইলী রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা সকাল থেকেই স্মার্টকার্ড নিতে কলেজ প্রাঙ্গণে ভিড় করছে। গার্লস কলেজের তিনটি কক্ষে একাধিক টিম স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ করে যাচ্ছে। তবে কমিশনের প্রয়োজনীয় লোকবলের তুলনায় স্মার্টকার্ড গ্রহণে লোকজনের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় কার্ড বিতরণে তাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে থাকে। অবশ্য কখন কোন এলাকায় কার্ড বিতরণ করা হবে বিষয়টি বেশিরভাগ নাগরিকের না জানার কারণে অযথা ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। সোমবার রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় কিছু অংশে কার্ড বিতরণ করা হলেও রমনা, মতিঝিল থানার অনেকে কার্ড নিতে কলেজে ভিড় করে। তবে নির্ধারিত দিনে তাদের কার্ড বিতরণের সময়সূচী না থাকায় অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিতরণে ব্যাপক প্রচার না চালানোর কারণে এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সঠিকভাবে প্রচার চালালে তাদের এই ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো না। ভুক্তভোগীরা জানান কোন ক্যাম্পে তাদের স্মার্টকার্ড দেয়া হচ্ছে সেটা তারা জানেন না। ক্যাম্পে এসে জেনেছেন আরও কয়েকদিন পরে কার্ড পাবেন। এদিকে বিতরণ তালিকায় নাম থাকার পর কার্ড না পেয়ে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বিভিন্ন কারণে অনেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আইডিতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। তাদের নাম, ঠিকানা লিখে রাখা হয়েছে। পরে তাদের কার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। আবার অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম ঠিকানা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। ফলে লিস্টে তাদের নাম নেই। তারাও কার্ড না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। অনেকে সংশোধন করে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন, ফলে তারাও কার্ড পাননি। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, যাদের কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না তাদের ঠিকানা আমরা রেখে দিয়েছি। তাদের কার্ড বাসার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। সরেজমিনে কার্ড বিতরণ পরিদর্শনে দেখা যায় সিদ্ধেশ্বরী কলেজের তিনটি রুমে রমনা থানার কাকরাইল অংশে, নিউ বেইলী রোড ও ডিআইটি কলোনির বাসিন্দাদের আলাদাভাবে কার্ড দেয়া হচ্ছে। প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর পর তালিকায় নাম আছে কিনা দেখে নেয়া হচ্ছে। এরপর তাকে একটি সিøপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিøপ দেয়া ব্যক্তিকে ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হচ্ছে। এরপর একটি যন্ত্রের সাহায্যে আইরিশ স্ক্যান করা হচ্ছে। এরপরই তাকে স্মার্টকার্ড দেয়া হচ্ছে। তবে লেমিনেটিং করা পরিচয়পত্র না নিয়ে তা ছিদ্র করে আবার ফেরত দেয়া হচ্ছে। সকাল নয়টা থেকে রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে উত্তরা থানায় কার্ড বিতরণে বিলম্ব হয়েছে বলে জানা গেছে। সকাল নয়টা থেকে কার্ড বিতরণ শুরু করে তা একটানা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। তবে প্রথম দিনে মাত্র ৩০ নাগরিকের মাঝে স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্ভব হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন প্রাথমিক বিতরণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে রাজধানীর ও সারাদেশের অন্যান্য এলাকায় বিতরণ শুরু হবে। রাজধানীর রামনা থানায় তিনটি ওয়ার্ডে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত কার্ড বিতরণ করা হবে। অপর দিকে উত্তরায় একটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত কার্ড বিতরণ করা হবে। আজ মঙ্গলবার রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে একই ক্যাম্পে কার্ড বিতরণ করা হবে। অপরদিকে উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টর এলাকা ও রানাভোলার ডিসিসির অংশে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। তবে স্মার্টকার্ড বিতরণের সময়সূচী সম্পর্কে যারা এখনও অবহিত নয় তাদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে সময়সূচী জেনে নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, যে কোন মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে ১০৫ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে নাগরিকেরা সহজেই জানতে পারবেন কখন কোথায় কোন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। এছাড়াও এনআইডির নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়েও কার্ড বিতরণের সময়সূচী সম্পর্কে জানা যাবে। এজন্য এনআইডি অনলাইন সার্ভিসে গিয়ে ‘অন্যান্য তথ্য’ ট্যাবে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ লিংকে গিয়ে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে কার্ড বিতরণের সময়সূচী সম্পর্কে জানা যাবে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো স্মার্টকার্ড বিতরণের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমে রাষ্ট্রপতির স্মার্টকার্ড প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্মার্টকার্ড হস্তান্তর করেন। এছাড়া জাতীয় ক্রিকেট দলের স্মার্টকার্ড একইদিন হস্তান্তর করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতির স্মার্টকার্ড বঙ্গভবনে গিয়ে তাঁর কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই রাজধানীসহ সারাদেশে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ কোটির বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
×