ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লবণ সমাচার

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লবণ সমাচার

দেশে বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ানোর কৌশল দীর্ঘদিনের। কখন যে কোন্্ পণ্যের দাম বাড়ে সেটা বলা মুশকিল। সুযোগ বুঝেই একশ্রেণীর মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়াতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বলা যায় কখন কোন্্ পণ্যের দাম বাড়ালে অধিক মুনাফা হবে তা ভালভাবেই অবগত থাকে তারা। গত কয়েক মাস ধরে বেড়ে চলেছে লবণের দাম। ২২ টাকা কেজি প্যাকেটজাত লবণের দাম বেড়ে এখন ৪২ টাকায় পৌঁছেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেশের সাধারণ মানুষকে। লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। মুখরোচক সব ধরনের খাবারেই লবণ অপরিহার্য। তাই লবণের দাম বাড়লে এর প্রভাব সব জায়গায় পড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। লবণের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত তুলে ধরছেন। দাম বাড়ার জন্য সরবরাহে ঘাটতি এবং আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলছেন তারা। এমনকি আমদানির বিষয়ে সরকার নমনীয় না হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কার কথা বলছেন তারা। বিসিকের তথ্য মতে, দেশে বছরে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন লবণের চাহিদা রয়েছে। গত বছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় সাড়ে ৩ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় লবণ কমিটি। সাধারণত আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয় দেশীয় শিল্প-পণ্য রক্ষার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো এতে উৎপাদনকারী কৃষক যে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না- এটাও স্পষ্ট। এই ক্ষেত্রে লবণ আমদানি নিয়ন্ত্রণে চাষী, মিল মালিক বা সাধারণ মানুষের চেয়ে উপকূলীয় এলাকার এক শ্রেণীর প্রভাবশালীই লাভবান হচ্ছে। প্রাপ্ত হিসাবে এ বছর উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন কম হলেই বাজার এমন অস্বাভাবিক হয়ে যাবে, এটা কোন যুক্তির কথা নয়। লবণ চাষীরা বলছেন, এবার মৌসুমে উৎপাদন ভালই হয়েছে। মজুদদাররা চাষীদের থেকে সস্তায় লবণ কিনে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছেন। এবার কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বেড়েছে অপরিশোধিত লবণের দাম। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে পরিশোধিত লবণের দামও। চামড়া প্রক্রিয়ার জন্য গত বছর অপরিশোধিত যে লবণের প্রতি মণের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। এই মূল্যবৃদ্ধি দেশের চামড়া শিল্পকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশে এমন কি সঙ্কট হয়েছে যার জন্য হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়বে? বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাব এর অন্যতম কারণ। এই সুযোগে যে যেভাবে পারছে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনতিবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সবার আগে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। আশার কথা হলো, লবণকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাই মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এতে লবণের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবে। নিয়ন্ত্রণ এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। আগে লবণের দাম বৃদ্ধির কারণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানা দরকার। এই মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। যে কোন মূল্যে লবণের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে।
×