ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাতের আঁধারে ঘরের মধ্যে বেপরোয়া বাস, সব তছনছ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাতের আঁধারে ঘরের মধ্যে বেপরোয়া বাস, সব তছনছ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছেই। ঘরও যেন নিরাপদ নয়। সড়কের যন্ত্রদানব বাস এবার উঠে পড়েছে ঘরের মধ্যে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজশাহীর বশির মিয়া ও রেশমা বেগম দম্পতির মৃত্যু হয়েছে নিজ ঘরে একটি বেপরোয়া বাসের চাপায়। ঘুমে আচ্ছন্ন এ দম্পতির আর সকাল হলো না। সকালের আলো ফুটলেও অন্ধকারে নিমজ্জিত তাদের পাশের ঘরে থাকা দুই সন্তানের চোখে মুখে। যেন রাতের আঁধার সব কেড়ে নিল ওদের। একটি বাস শুধু তাদের মা-বাবাকেই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র-সব। সবকিছু তছনছ। কিছুই রইলো না তাদের। মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় স্টিয়ারিং ধরেই চালক ঘুমিয়ে পড়ায় যাত্রীবাহী একটি বেপরোয়া বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের বাড়িতে ঢুকে ঘুমন্ত এ স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। বাস চাপায় ঘটনাস্থলেই বশির দম্পতি মারা যান। তবে অক্ষত রয়েছে তাদের তিন শিশু সন্তান। নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি আমান উল্লাহ জানান, রাত পৌনে ২টার দিকে কেয়া পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৭২৮৪) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। এ সময় চালক ঘুমিয়ে পড়ায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বশিরের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই বশির ও তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসের নিচ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। বশির রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার স্ত্রীও গৃহকর্মীর কাজ করতেন। ওসি আরও জানান, বাসটির কিছু অংশ বশিরের পাশের বাড়িতেও ঢুকে পড়ে। এতে দিপু মিয়া (৩৫) ও চম্পা বেগম (৩০) নামে অপর এক দম্পতি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনার পরই বাসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার পালিয়ে গেছে। আবুল কালাম আজাদ নামে ওই বাসের এক যাত্রী জানান, দুর্ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ আগ থেকেই বাসের চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। কয়েকবার তাকে সতর্কও করেন যাত্রীরা। পরে বহরমপুর রেলক্রসিংয়ের বাঁকে বাঁক না নিয়ে চালক সরাসরি বাড়ির ভেতরে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এদিকে বুধবার রাতের ঘটনায় বাবা-মাসহ সবকিছু হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ বশির দম্পতির তিন সন্তান। এদের মধ্যে একজন একটু বড় হলেও অন্য দুটি ছোট। বুধবার সকালে বশিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বহু মানুষ তার বাড়িতে ঢুকে পড়া বাস দেখতে এসেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, বশিরের জন্মস্থান বরিশাল। ২৫ বছর আগে তিনি রাজশাহীতে বিয়ে করে সরকারী এ জমিতে বাড়ি করেন। এরপর থেকে তারা এখানেই বসবাস করতেন। বশির ভ্যান চালাতেন। আর রেশমা গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তাদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনার সময় আলিফদের নানি আমেনা (৭০) পাশের একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, মাঝ রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে তার ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙার পর তিনি দেখেন, শরীরের ওপর টিনের ছাদ নেমে এসেছে। টিন সরিয়ে বেরিয়েও তিনি আঁচ করতে পারেননি কী ঘটেছে। তারপর যখন দেখেন, বাড়ির ভেতর যাত্রীবাহী বাস আর বহু মানুষের হুড়োহুড়ি-তখনই তিনি ঘটনাটি টের পান। এরপর মেয়ে-জামাইকে খোঁজা শুরু করেন। কিন্তু পাননি। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসের নিচ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। কেয়া পরিবহনের ওই বাসটিতে চড়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাঘরাইল গ্রামের মামুনুর রশিদ (২৫)। তিনি বসেছিলেন চালকের পাশের আসনটিতেই। মামুন জানান, নাচোল থেকে বাসটি রাত ১০টায় ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস ছাড়ে রাত ১২টায়। এই দুই ঘণ্টা পুষিয়ে নিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী আসার পর থেকে চালক বাসের গতি বাড়িয়ে দেয়। চালকের কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবও ছিল। এ জন্য বাসের যাত্রীরা তাকে কয়েকবার গতি কমিয়ে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেন। কিন্তু চালক কারও কথা কানে না তুলে বেপরোয়া গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বহরমপুর এলাকায় রেলক্রসিংয়ের বাঁক নিতে গিয়ে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। গাড়ির গতি এত বেশি ছিল, প্রায় এক ফুট উঁচু কংক্রিটের ফুটপাত পেরিয়ে সোজা বশিরের বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। এতে বাসের সামনের দিকে থাকা ৬-৭ জন যাত্রীও আহত হন। সিলেটে বাসচাপায় ২ আরোহীর মৃত্যু ॥ সিলেট অফিস জানায়, বুধবার দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার এলাকায় বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, লালাবাজার ইউনিয়নের বাঘরখলা কালাপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে আব্দুস শহীদ (২৭) ও মকবুল মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন মেম্বার ইউনুছ আলী (৩০)। বাগেরহাটে বাসচাপায় হত ১ ॥ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, মোল্লাহাটে ঢাকা-মাওয়া সড়কের আবুল খায়ের সেতুর টোল ঘরের সামনে বাসের চাপায় মঙ্গলবার রাতে শাহ নেওয়াজ (২০) নামে এ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। স্কুলছাত্রী নিহত ॥ স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, দুলাভাইয়ের বাড়ি হতে দাওয়াত খেয়ে নিজবাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে ফেরদৌসি আক্তার নামের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে জলঢাকাÑ রংপুর সড়কের কিশোরীগঞ্জ উপজেলার রণচ-ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি পুলিশ বক্স নামক স্থানে। নিহত ফেরদৌসি রণচ-ি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মফছিল আহমেদের মেয়ে এবং বড়ভিটা রণচ-ি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। যশোরে বাস দুর্ঘটনায় আহত ২৫ ॥ যশোর অফিস জানায়, বুধবার ভোররাতে যশোরে ঢাকাগামী পরিবহন দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। যশোর-মাগুরা মহাসড়কের সদর উপজেলার কোদালিয়া নোঙরপুর মাজারের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভাঙ্গায় মাইক্রোবাস চাপায় শিশু নিহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মাইক্রোবাসের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে তামিম (৮) নামে এক শিশু। বুধবার দুপুর পৌনে একটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রাম বাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু তামিম উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের দিঘলকান্দা গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর শেখের ছেলে। মির্জাপুরে বাস উল্টে নিহত ১ ॥ বিডিনিউজ জানায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে চালকের সহকারী নিহত হয়েছেন। বুধবার ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চরপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
×