ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদেশের কিছু কুসন্তান পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী হিসেবে বাঙালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামস নামে কমান্ড বাহিনী গড়ে তারা বাঙালী নিধনে মত্ত হয়। তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় ছিল জামায়াত, মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলামসহ কতিপয় বাঙালী ও স্বাধীনতা বিদ্বেষী দলভুক্ত। পাকিস্তানী হানাদারদের সহযোগী হিসেবে তারা কেবল গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগেই লিপ্ত ছিল নাÑ সে সময় লুটপাটের মাধ্যমে অর্থের পাহাড়ও গড়ে তুলেছে কেউ কেউ। স্বাধীনতার পর তারা আত্মগোপনে থাকলেও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও পরে খালেদা জিয়ার সহযোগী হিসেবে ক্ষমতার কাছে থেকে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়। সম্প্রতি দণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ ‘বাজেয়াফতে’ আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে। এই ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। সময়ের প্রয়োজনে এই দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত না করলে শহীদ পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হবে না। নুরেমবার্গ ট্রায়ালেও দণ্ডপ্রাপ্তদের সম্পদ বাজেয়াফত করার উদাহরণ রয়েছে। নুরেমবার্গের আদলে বাংলাদেশেও আইনটি করা হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি দায় শোধের সুযোগ হবে। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী। বেশকিছু আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মীর কাশেমের সম্পদ কয়েক হাজার কোটি টাকার। যদিও তার ব্যক্তি নামে সম্পদ কম দেখানো হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর হওয়া আরেক যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন ঢাকার বৃহৎ কর ইউনিটের করদাতা। মীর কাশেমের পরই তার অবস্থান। এর পরই রয়েছে আজীবন কারাদ-প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সম্পদ। তার পরই মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের সম্পদ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী শীর্ষ ৮ যুদ্ধাপরাধীর রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। যা গেল ৭ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। যার মধ্যে মীর কাশেম আলীরই ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদের কথা শোনা যায়। যুদ্ধাপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার লক্ষ্যেও আইন করা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। একই সঙ্গে স্বাধীনতার পর শত্রুপক্ষের ফেলে যাওয়া সম্পদ জাতীয়করণের লক্ষ্যে আইন হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে দেশের অপরাধীদের শাস্তি দেয়া মূল লক্ষ্য হওয়ায় ওই আইনে অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করার বিধান সংযুক্ত করা হয়নি। ওই আইনেই এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে। সে কারণে শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রায় কার্যকর শেষে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করার জোর দাবি উঠেছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ সংশোধন করে সম্পত্তি বাজেয়াফতের নতুন আইন করা যাবে। একথা সত্য যে, যুদ্ধাপরাধীদের কারণে বহু পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক শহীদ পরিবারে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে। শহীদ পরিবারগুলো মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও বহু পরিবার উঠে দাঁড়াতে পারেনি। একই সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এখন সরকারের উচিত তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করে যেসব শহীদ পরিবারের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের কল্যাণে এসব অর্থ ব্যয় করা। যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দলের সম্পদ বাজেয়াফত না করলে তারা এসব অবৈধ অর্থ জঙ্গী অর্থায়নসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিধনে ব্যয় করবে। নিকট অতীতে এর বহু প্রমাণ মিলেছে। দেশবাসী মনে করে রাষ্ট্রের উচিত হবে তাদের সব সম্পদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়া।
×