ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মর্মান্তিক!

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মর্মান্তিক!

পবিত্র ঈদ-উল-আযহার প্রাক্কালে রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড নামের একটি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে ২৫ জন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হওয়ার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। নিহত ও আহতের অধিকাংশ ওই কারখানার পুরুষ ও নারী শ্রমিক। এর বাইরে রয়েছে পথচারী ও শিশু। অগ্নিদগ্ধ অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বিধায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ে পাঁচ তলা ভবন ও পাশের দুটি তিন তলা ভবন ধসে পড়ে। অন্য একটি ছয় তলা ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় মারাত্মকভাবে। কারখানাটিতে প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল তৈরি করা হতো। অগ্নিনির্বাপণের সঙ্গে জড়িত ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রাথমিক ধারণা, কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে এও সত্য, কারখানাটিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার্য বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ রক্ষিত ছিল, যা আগুন ও বিস্ফোরণের তীব্রতা থেকে সহজেই অনুমিত হয়। যেটা দুঃখজনক, তা হলো রবিবার কার্যদিবসের পর থেকে কারখানাটিতে ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা বোনাস নিয়ে যার যার গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ-উৎসব উদযাপনের জন্য। তাদের সেই আশা ও স্বপ্ন মূহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল মারাত্মক একটি দুর্ঘটনায়। ভয়ঙ্কর ও মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয় অধিবাসী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষ, সর্বোপরি দমকল বাহিনীর সূত্রে যা জানা যায় তা হলো, ভবনটির নির্মাণে আদৌ কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি। সত্তরের দশকে নির্মিত ভবনটি পরে সম্প্রসারণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। মূল ভবনটি প্রায় ৪৫ বছরের পুরনো, জরাজীর্ণ। জরুরী কোন নির্গমনের পথ নেই ভবনটিতে। একটি মাত্র ফটক দিয়ে সবাই যাওয়া-আসা করে থাকে। অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নাজুক। নির্মাণ ত্রুটি, পুরনো বয়লার সর্বোপরি বিপুল রাসায়নিক পদার্থ মজুদ থাকার কারণে দীর্ঘ ২৮ ঘণ্টা চেষ্টার পরও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কারখানাটির রক্ষণাবেক্ষণসহ জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় মালিক পক্ষের অবহেলার বিষয়টি দৃশ্যমান। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী সারাদেশে অন্তত পাঁচ হাজার ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বয়লার ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণসহ নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়মিত পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রবল ঘাটতি রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত বয়লারের সংখ্যা মাত্র ৪শ’। অথচ ছোট বড় মিলিয়ে বয়লার ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় দশ হাজার। বয়লার পরিদফতরের মাত্র ২০ জনের জনবল দিয়ে এত বিপুল সংখ্যক বয়লার নিয়মিত দেখভাল ও নজরদারি সম্ভব নয় কোন অবস্থাতে। এ ক্ষেত্রে সরকার তথা শিল্প মন্ত্রণালয়কে জরুরী হস্তক্ষেপ করতে হবে। পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বয়লার সংবলিত কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে অবিলম্বে। দুর্ঘটনা তদন্তে দুটো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের ১০-১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। সে ক্ষেত্রে মালিক পক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশও রয়েছে। এসবই যাতে যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে শিল্প মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মালিক পক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে। নিহত ও আহতদের পরিবার ও স্বজনদের জানাই গভীর সমবেদনা। অদূর ভবিষ্যতে আর যাতে এ রকম দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
×