ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

১১ কীর্তিমান নারী পেলেন অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

১১ কীর্তিমান নারী পেলেন অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাঁরা সবাই কীর্তিমান নারী। সমাজের অজস্র বাধা পেরিয়ে নানা ক্ষেত্রে রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। আপন মেধা ও প্রচেষ্টায় পর্বতারোহণ, ক্রীড়া, সঙ্গীত, প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে রেখেছেন অনবদ্য ভূমিকা। আর এভাবেই তাঁরা সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের দেখিয়ে যাচ্ছেন আলোর পথ। এমন কীর্তিমান ১১ নারী পেলেন ২০১৫ সালের অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা। শনিবার তাঁদের হাতে তুলে দেয়া হয় এই পদক। এবারের সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নারীরা হলেন লুভা নাহিদ চৌধুরী (সাংগঠনিক দক্ষতা), সোনিয়া বশির কবির (প্রযুক্তিপেশা), ওয়াসফিয়া নাজরীন (পর্বতারোহণ), মালিহা এম কাদির (উদ্যোক্তা), অণিমা মুক্তি গোমেজ (সঙ্গীত), সুপ্রীতি ধর (সাংবাদিকতা), মাবিয়া আক্তার ও মাহফুজা খাতুন (খেলাধুলা), অপর্ণা ঘোষ (চলচ্চিত্র), উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুনিয়া (শিক্ষা) এবং সাহিদা আক্তার স্বর্ণা (সমাজকর্ম)। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হলো অনন্যা শীর্ষদশ-২০১৫ প্রদান অনুষ্ঠানে। দশটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১১ জন বিশিষ্ট নারীকে দেয়া হলো অনন্যা শীর্ষদশ পুরস্কার। শনিবার সকালে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। কৃতী নারীদের দেয়া হয় উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও সনদপত্র। সম্মাননা তুলে দেন নারী আন্দোলনের তিন বিশিষ্ট নেত্রী মাহফুজা খাতুন, খুশী কবির এবং ডা. দীপুমনি। অনন্যার সম্পাদক ও প্রকাশক তাসমিমা হোসেনের সঞ্চালনায় সম্মাননা প্রদান পর্বটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাসমিমা হোসেন বলেন, নারীদের প্রতি অনাচারের কথা নারীদেরই বলতে হবে। দাবি না তুললে, কথা না বললে সমাজ থেকে অন্ধকার দূর হবে না। তিনি বলেন, এখনও সময়টা নারীদের জন্য খুব অনুকূল নয়। যৌন নিগ্রহ সমাজ থেকে এখনও দূর করা যায়নি। নিজেদের বঞ্চনার কথা বলতে এখনও মেয়েরা ভয় পায়। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। সরকারও নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান সুসংহত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। সমাজের বাধা পেরিয়ে নারীর অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক পথ বাকি। লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, সমাজে আরও অনেক যোগ্য নারী আছে, আশা করি অনন্যা তাদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করবে। সোনিয়া বশির কবির বলেন, আমার ক্ষেত্র প্রযুক্তি। এই ক্ষেত্রে এখনও পুরুষের প্রাধান্য বিদ্যমান। আশা করি আমার মতো আরও অনেক নারী এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন। মালিহা এম কাদির অনন্যা সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি প্রশংসা করে বলেন, মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে একটি রোলমডেল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অণিমা মুক্তি গোমেজ বলেন, একসময় লোকসঙ্গীত শিল্পীদের কিছুটা হেয় চোখে দেখা হতো। তাদের সম্মাননা দেয়া মহান একটি কাজ। সুপ্রীতি ধর বলেন, উইমেন চ্যাপ্টারে সাহসী নারীরা একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছেন। আমার মনে হয় আজকের এই অর্জন আমাদের শক্তি ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। মাহফুজা খাতুন সাঁতারে সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ করেন। মাবিয়া আক্তার বলেন, নারীদের খেলাধুলার ক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বদল হওয়া খুব দরকার। অপর্ণা ঘোষ বলেন, আমি নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেই কাজ করে যেতে চাই। আমার পরিবার বিশেষ করে বাবা আমাকে নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসাবে নড় হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুুনিয়া বলেন, যৌন হয়রানির সবচেয়ে বেশি শিকার হন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীরা। প্রতিবন্ধীদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সমাজের কাছে দাবি জানান। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রতিবাদী তরুণী সাহিদা আক্তার স্বর্ণা বলেন, আমি চাই বাংলাদেশে হাজার হাজার স্বর্ণা ইউসুফ জাই মালালা হয়ে উঠুক। অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়া নারীদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর সঙ্গে ছিল সাধনা নিবেদিত নৃত্যানুষ্ঠান এবং ভাবনগর পরিবেশিত চর্যাপদের গান। এবারের শীর্ষদশ সম্মাননা পাওয়া কণ্ঠশিল্পী অণিমা মুক্তি গোমেজও লোকসংগীত পরিবেশন করেন। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সাল থেকে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১০ জন বিশিষ্ট নারীকে এই সম্মাননা দেয়া হয়। গত বাইশ বছরে ২২০ জন কৃতী নারী পেয়েছেন এই সম্মাননা। শীর্ষদশ সম্মাননাপ্রাপ্ত ২২০ নারীর অর্জন ও জীবন সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত অনন্যা শীর্ষদশ কফি টেবিল বুকের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে এবার।
×