ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনতার সহায়তায়

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জনতার সহায়তায়

কুলাঙ্গারটি ধরা পড়েছে শেষ পর্যন্ত। পালিয়ে বাঁচতে পারেনি। ঢাকা থেকে দিনাজপুর, তারপর সেখান থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে নীলফামারী- এভাবে পালাতে পালাতে শেষ পর্যন্ত জনতার সহায়তায় ধরা পড়েছে কিশোরী রিশার খুনী ওবায়দুল। এতে স্বস্তি নেমে এসেছে জনমনে, বিশেষ করে রিশার সহপাঠীরা আশ্বস্ত হয়েছে। তারা আন্দোলন স্থগিত করে পুনরায় ফিরে গেছে শ্রেণীকক্ষে। দেশের মানুষ বুঝেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন যথেষ্ট সক্রিয় ও আন্তরিক। ওবায়দুল এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পালিয়েছে, পুলিশও হাল না ছেড়ে আসামি ধরার জন্য সম্ভাব্য সব জায়গায় হানা দিয়েছে। নীলফামারীর ডোমার এলাকাবাসীর সহায়তায় শেষ পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হলো আসামি। এতে আরও একবার প্রমাণিত হলো সাধারণ মানুষ সতর্ক সজাগ থাকলে এবং সহযোগিতা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধ দমন সহজতর হয়। অভিভাবকরা যথার্থই প্রশ্ন রেখেছেন, যদি একজন ছাত্রী এভাবে রাজপথে ঘাতকের হাতে খুন হয়, তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? বাবা-মা কোন সাহসে সন্তানকে স্কুলে পাঠাবেন? পুলিশ ও র‌্যাবকে সহায়তাকারী এলাকাবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন। অভিনন্দন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও, যাঁরা অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জনমত তৈরির কাজ করেছে। একই সঙ্গে পুলিশের ভেতরেও আসামি ধরার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আশাবাদ ব্যক্ত করে আগেই বলেছিলেন, আসামির নাম-পরিচয় ও ছবি যখন মিডিয়ায় চলে এসেছে তখন অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সহজ হবে। সেই কাজটি সত্যিকারার্থেই সহজতর করে দিয়েছে সাধারণ মানুষ। পথে-ঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি কমেছে বলে অনেকে মনে করেন। আসলে কি কমেছে? এ ধরনের ঘটনা প্রায়শ গোপন করে যাওয়া হয়। ধারণা হয় রিশার অভিভাবকরা ছুরিকাঘাতের আগ পর্যন্ত এটা গোপনই রেখেছিলেন। এটা একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্ষোভের কারণ যে, প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত জনপদে স্কুলের সামনে বখাটেটি যখন হামলা করল তখন আশপাশের মানুষরা কেন বাধা দিতে এলো না! রিশার মৃত্যুর পর এ নিয়ে সম্পাদকীয়তে আমরা নগরবাসীর আত্মকেন্দ্রিকতার বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। সেখানে হতাশার সুরটিও অপ্রকাশিত ছিল না। যদিও রিশার হত্যাকারীকে ধরতে সাধারণ মানুষের সক্রিয় সহায়তা এখন আমাদের মনে আশাবাদ জাগিয়ে তুলবে। এখনও সমাজে ইতিবাচক, উপকারী ও অপরাধীকে পাকড়াও করার মতো মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ রয়েছে। তাদের শুভবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য শুধু সমাজের অগ্রসর সচেতন ও সংবেদনশীল মানুষের উদ্যম ও উদ্যোগ দরকার। একই সঙ্গে এই সাধারণ মানুষের মধ্যে সাহস জোগানো এবং তাদের তৎপরতার স্বীকৃতি দিয়ে সম্মান জানানোয় সরকারেরও ভূমিকা রয়েছে। রিশা হত্যার ঘটনায় আমরা আহ্বান জানিয়ে বলেছিলামÑ সমাজেরও জেগে ওঠা চাই। সমাজ যে জেগে উঠছে তার আভাস আজ পাওয়া যাচ্ছে। এখন অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে তদন্তকাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে দক্ষতা ও আন্তরিকতা প্রত্যাশিত। রিশা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে যে খুনীর ক্ষমা নেই। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। তাহলেই দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
×