ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ ঈদযাত্রায় এবারও স্কাউটরা কাজ করবে ॥ ও. কাদের

’৩৫ সালের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে যোগাযোগ খাতে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

’৩৫ সালের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে যোগাযোগ খাতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোজার ঈদের মতো ঈদ-উল-আযহায় মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় রোভার স্কাউট সদস্যরা কাজ করবেন। পাশাপাশি তারা পশুর হাটেও দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা আবারও এক হাজার রোভার স্কাউট নিয়োগ দিতে চলেছি বিভিন্ন পয়েন্টে। যেসব জায়গায় কোরবানির পশুর হাট বসবে তার আশপাশে আমরা রোভার স্কাউটদের ডিউটি রাখব। তারা পুলিশকে সহযোগিতা করবে। ঢাকার যানজটের কারণ এক্সিট ও এন্ট্রি পয়েন্টে রোভার স্কাউট সদস্যরা থাকবেন। সংখ্যা এক হাজার ঠিকই আছে। ঈদের আগে চারদিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা তারা এ দায়িত্ব পালন করবেন। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২০ বছর মেয়াদী সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা আরএসটিপির বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। ফিটনেসবিহীন গাড়িতে কোরবানির পশু পরিবহন করা যাবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উৎস মুখেই এ সকল পরিবহন বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে; সেটা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারও মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর পক্ষ থেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। ঈদ-উল-ফিতরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার গার্মেন্ট কর্মীদের ঈদের আগে আলাদা আলাদা দিনে ছুটি দিতে বিজিএমইএকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান কাদের। তিনি বলেন, গতবারের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত খারাপ। এজন্য যে আমি নিজেই চন্দ্রাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ওই অবস্থায় দেখলাম কিভাবে বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো জনস্রোত, সব গার্মেন্টস একসঙ্গে ছুটি। রাস্তায় তখন জনজট হয়ে গেছে, গাড়ি চলার আর জায়গা নেই। সাভার-নবীনগর এলাকায় একদিন এবং গাজীপুর টঙ্গী এলাকায় অন্য একদিন ছুটি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে ভোগান্তি কমে আসবে বলে মনে করি। এবার ঈদে বিআরটিসির ৪০০ স্পেশাল বাস থাকছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিআরটিসির আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধায় সাভার-চন্দ্রা-আশুলিয়া এলাকায় ৩০টি বিআরটিসি স্ট্যান্ডবাই থাকবে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, বিগত প্রায় সাড়ে ৭ বছরে বিভিন্ন খাতে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জনসংখ্যা ও আয়তন বেড়েছে। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়েছে। নগরীর পরিধি বাড়ায় সেবা যুগোপযোগীকরণের চাপও সরকারের ওপর বাড়ছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে যানজট এখন অনিবার্য বা বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপচয় হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। এ প্রেক্ষাপটে মেগাসিটির পরিবহন ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নে এসটিপি সংশোধন ও হালনাগাদকরণের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়। এসটিপি সংশোধনে সরকারের অনুরোধে সাড়া দেয় জাপান সরকার। এ ধারাবাহিকতায় জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সহায়তায় ২০১৪ সালে এসটিপি হালনাগাদকরণের কাজ শুরু হয় এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০১৫-৩৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা আরএসটিপি চূড়ান্ত করা হয়। সংশোধিত এসটিপি গত ২৯ আগস্ট মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন যাত্রী একটি পরিবহনে উঠে নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে নামা পর্যন্ত এক ট্রিপ ধরা হয়। এ হিসাবে ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্ক, ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ ও নির্গমন মুখ এবং ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিলিয়ন ট্রিপ তৈরি হয়। সংশোধিত এসটিপি অনুযায়ী ২০২৫ সালে ৪২ মিলিয়ন ট্রিপ এবং ২০৩৫ সালে ৫২ মিলিয়ন ট্রিপ তৈরি হবে। এই বিশাল পরিবহন চাহিদা মেটানোর জন্য সংশোধিত এসটিপিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা মেট্রোরেল রুট নির্মাণ; ২টি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি সড়ক নির্মাণ, ইনার, মিডল এবং আউটার নামে ৩টি রিং রোড নির্মাণ, ইনার ও আউটার রিং রোডকে সংযোগকারী ৮টি রেডিয়াল সড়ক নির্মাণ, ৬টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ে), ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব বা টার্মিনাল নির্মাণ, মহাখালী বাস টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, গাবতলী সার্কুলার ওয়াটারওয়ে স্টেশন, ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার জলপথ উন্নয়ন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং ট্রাফিক সেফটি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতা শীর্ষক জরিপের ভিত্তিতে শহরের তালিকায় এবার ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সিরিয়ার দামেস্ক, লিবিয়ার ত্রিপোলি ও নাইজেরিয়ার লাগোস-এই তিনটি সিটির পর আমরা (ঢাকা) মোস্ট আনলিভ্যাবল সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (বিশ্বে বসবাসের অনুপযুক্ত শহর)। এটা (ঢাকা) আসলেই অপরিচ্ছন্ন, অপরিকল্পিত একটা শহর। আজকে আমাদের যে উন্নয়ন, অর্জন, যেটা অর্জিত হয়েছে সেই উন্নয়নের অর্জনকে লজ্জা দেয়। আমাদের উন্নয়ন অর্জনের সঙ্গে ঢাকা সিটির যে চেহারা মানায় না। ঢাকা সিটির চেহারা আমাদের সত্যিই লজ্জা দেয় বলেন ওবায়দুল কাদের। এ অবস্থার অবসানেই এই আরএসটিপি প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য এটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। যে কোন দফতর বা উন্নয়ন সংস্থা শুধু সংশোধিত এসটিপির আওতাভুক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারবে। সংশোধিত এসটিপিতে সুপারিশকৃত প্রকল্পের বাইরে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২ অনুযায়ী ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ বা ডিটিসিএ আরএসটিপির অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প গ্রহণের সম্মতি ও বাস্তবায়ন সমন্বয় সাধন করবে। সময়ের প্রয়োজনে উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতি ৫ বছর পরপর সংশোধিত এসটিপি অধিকতর সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
×