ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণমুক্ত বিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ আগস্ট ২০১৬

ঋণমুক্ত বিদ্যুত কেন্দ্র

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠতা জরুরী। আর তা করা গেলে অসম্ভবকেও যে সম্ভব করা যায়, দেশের বিদ্যুত খাত তারই প্রমাণ। বিদ্যুত ঘাটতির দেশে লোডশেডিং ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ বিস্ময়কর বৈকি। গত সাড়ে সাত বছরে বিদ্যুত খাতে নেয়া নানা পদক্ষেপ দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে সংহত করেছে। বিদ্যুতেও সরকার অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। এর ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের তিন হাজার চার শ’ মেগাওয়াট থেকে গত সাড়ে সাত বছরে বিদ্যুত উৎপাদন নয় হাজার ছত্রিশ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ফলে আগের মতো লোডশেডিং দৃশ্যমান নেই। সরকারের আশা, ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ ঘরে পৌঁছে যাবে বিদ্যুত। তাতে মনে হয়, সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয়, যখন লোডশেডিং হয়ে যাবে অতীত স্মৃতি। সরকার বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় বিদ্যুত সঙ্কট দূর করার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার গঠনের সময় দেশে বিদ্যুত উৎপাদিত হতো তিন হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। আর এখন হচ্ছে নয় হাজার মেগাওয়াট। তথাপি এখনও প্রায় পঁয়ত্রিশ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার বাইরে। ২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহার ‘ভিশন ২০২১’ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত যাবে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কারণে ২০১৮ সালের মধ্যেই কিছু পাহাড়ী ও উপকূলীয় দুর্গম এলাকা বাদে সবখানে পৌঁছে যাবে বিদ্যুত। গত সাড়ে সাত বছরে সম্পাদিত ৮১টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদনে এসেছে ৬৫টি। এতে গড়ে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়া ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ছয় শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত। আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করে বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন। সার্বিক দিক বিবেচনায় বিদ্যুত খাতে সরকার সাফল্য দেখিয়েছে। দেশের উন্নয়নের একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ। আগামী পনেরো বছরের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানির সংস্থান জরুরী, জ্বালানি সংস্থানেও সরকার নিয়েছে মহাপরিকল্পনা। দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, সে অনুযায়ী যোগান বজায় রাখতে সরকারও সক্রিয়। বিদ্যুত বিতরণ ও সঞ্চালন অবকাঠামো ও ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। এটা বাস্তব যে, বাংলাদেশের সমমানের কোন দেশ এত অল্প সময়ে বিদ্যুত খাতে এমন অর্জন দেখাতে পারেনি। বর্তমানে ষাট শতাংশের বেশি মানুষ বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুত ব্যবহারের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট। ঘণ্টাপ্রতি থেকে বেড়ে প্রায় তিন শ’ কিলোওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুত খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুত খাতে দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে সহজশর্তে ঋণ যে মেলে তা নয়, উন্নয়ন সহযোগীরাও কঠিন শর্তারোপ করে। এ জন্য বিদ্যুত খাতে এ ধরনের ঋণ অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সরকার বিদেশী ঋণে নতুন করে আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী নয়। বিদ্যুত প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঋণের পরিবর্তে বিদেশীরা এ খাতে বিনিয়োগ করবে, সরকার তাই চায়। এক্ষেত্রে শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনই নয়, সব ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ গ্রহণে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। সরকার প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামো তৈরি করে দেবে। এগুলোই হবে সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঋণের বদলে বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে বলেছেন, যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্ত বিদ্যুত খাতে ভারসাম্য নিয়ে আসবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে ঋণমুক্ত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করাই সঙ্গতিপূর্ণ। এই খাতে বিনিয়োগ যাতে আসে, সে চেষ্টা করাই সর্বাগ্রে জরুরী। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথটিই নিতে হবে খুঁজে।
×