ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী অর্থদাতারা শেষ অবধি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে!

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী অর্থদাতারা শেষ অবধি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে!

রহিম শেখ ॥ সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়া এবং কল্যাণপুরে জঙ্গী হামলার ঘটনার পর ফের আলোচনায় কারা জঙ্গি উত্থানের পেছনে অর্থ যোগাচ্ছেন। অর্থদাতাদের খোঁজে ব্যাপক তৎপরতা চালালেও ধরা পড়েনি মূল হোতারা। সন্ত্রাসী বা জঙ্গী গোষ্ঠীর ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা অর্থের খোঁজে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। ভবিষ্যতে কোনভাবেই যাতে এসব অর্থ জঙ্গীরা ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী বা সংগঠনের নামে ব্যাংকে কোন হিসাব থাকলে বা কোন লেনদেন হলে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি জঙ্গী হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে কয়েক দফায় এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এদের হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, হিসাব বিবরণী ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক সন্দেহভাজন হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে জঙ্গী উত্থানের পেছনে অর্থদাতাদের খোঁজে ব্যাপক তৎপরতা চালালেও এখন পর্যন্ত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের অনুসন্ধান এবং এ অভিযোগে গেল মাসে সিঙ্গাপুরে চার বাংলাদেশীকে কারাদ- দেয়ার পর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, দেশী-বিদেশী চক্র এই অর্থের জোগান দিচ্ছে। তাদের খোঁজে গোয়েন্দাদের তৎপরতাও বেড়েছে। বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী, শিক্ষক এবং রাজনৈতিক নেতাদের সন্দেহে এনে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন এনজিও অর্থের বড় জোগানদাতা। এ ছাড়া সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ীরাও অর্থায়ন করছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে বিক্ষিপ্তভাবে জঙ্গী হামলা হলেও সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনায় দেশকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, অর্থদাতাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়ে গত দুই মাসে কয়েক দফায় চিঠি পাঠানো হয়। এদিকে সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মে মাসে এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে অর্থদাতাদের চিহ্নিত করা যায়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অর্থের অস্বাভাবিক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে বা অনুরূপ কোন হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অবহিত করে। কোথাও জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেই সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। এরপর গত ১৯ ও ২০ জুলাই সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে বৈঠক করে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে যাতে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অর্থ স্থানান্তরিত না হয়, এ জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সজাগ থাকার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রকৃত সুবিধাভোগীর তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংক শাখাগুলো আইনকানুন সঠিকভাবে পরিপালন করছে কি না, তা যাচাই করে আগামী অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই সভার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে সন্ত্রাসীদের ব্যাংক হিসাব তাৎক্ষণিক বন্ধের এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় জঙ্গী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, হিসাব বিবরণী ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসী বা সংগঠনের নামে ব্যাংকে কোন হিসাবে পাওয়া গেলে তা তাৎক্ষণিক স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো নিজ বিবেচনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে পারবে। তবে প্রচলিত আইনে যারা সন্ত্রাসী, তারাই এ আইনের আওতায় পড়বে বলে তিনি জানান। এর আগে গত ১৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলায় নিহত জঙ্গী সাইফুল হক সুজনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস টেল ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের নামে একাধিক হিসাব জব্দ করা হয়। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও মেইনটেন্যান্স চার্জের নামে জঙ্গীদের কাছে কোটি কোটি টাকা এসেছে দেশে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এসব হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। এসব অর্থ এসেছে মূলত ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, সুরিনাম, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এসব দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও মেইনটেন্যান্স চার্জ হিসেবে এ অর্থ পাঠিয়েছে। হিসাব দুটিতে বিদেশ থেকে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টাকা পাঠিয়েছে তার তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংক এগমন্ড সিকিউরড ওয়েব (ইএসডাব্লিউ) এবং ওই সব দেশের ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটগুলোকে অনুরোধ করেছে।
×