ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শোষিত জনতার দ্রোহের প্রতীক ‘রাঢ়াঙ’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ আগস্ট ২০১৬

শোষিত জনতার দ্রোহের প্রতীক ‘রাঢ়াঙ’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের প্রথমেই দেখা যায় সাঁওতালদের নিজ বাসভূম ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য। তানোর নামের এক লোকালয়ে সাঁওতালরা বাস করে। সেখানে তাদের কোন নিজস্ব জমি নেই। পরের জমিতে চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। সেখান থেকে বিশম্বর নামক এক জোতদারের প্রলোভনে তারা তানোর ছেড়ে পাড়ি জমায় ভীমপুরে। জমি পাবার আশায় ছেড়ে যায় তাদের দীর্ঘদিনের বসতভিটা। নতুন জমির মালিকানা, নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে তারা পাড়ি দেয়। পাহাড়-জঙ্গল কেটে নতুন যে জমিতে তারা ধান বুনল সেই জমির মালিকানা তাদের হাতে নেই, ধানের মালিকানা নেই। তারা জমির কাগজ পায় না। আজ-কাল বলে বিশম্বর তাদের প্রতিদিনই ঘোরায়। কিন্তু তাদের দিয়ে ঠিকই ফসল ফলিয়ে তার বড় অংশটা সে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে সাঁওতালদের মনে। এদিকে ভীমপুরের স্থানীয় আরেক জোতদার হাতেম আলী তার এলাকায় সাঁওতালদের মেনে নিতে পারে না। সে বিভিন্নভাবে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালায়। এমনকি সাঁওতালদের পেছনে পুলিশও লেলিয়ে দেয়। এরই মধ্যে বিশম্বরের মৃত্যু হয়। পরে বিশম্বরের ভাইয়ের ছেলে গদাই হাতেম আলীর সঙ্গে মিলে সাঁওতালদের শোষণের ফন্দি আঁটে। কিন্তু সাঁওতালরা যখন দেখে যে, হাতেম ও গদাইয়ের লোকজন তাদের না জানিয়ে তাদের ঘামে ফলানো ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে তখন তারা ফেটে পড়ে বিদ্রোহে। এই পরিস্থিতিতে তাদের দরকার হয়ে পড়ে সিধু, কানু চাঁদদের মত একজন নেতার; যিনি তাদের নেতৃত্ব দেবেন, এনে দেবেন জমির অধিকার, ফসলের কতৃত্ব। তখনই সাঁওতালদের শেষ বিপ্লবী আলফ্রেড সরেনের আবির্ভাব ঘটে। তার নেতৃত্বে সাঁওতালরা ধান, জমির মালিকানা আদায়ে রুখে দাঁড়ায়। তাদের তীর, ধনুক আর মাদল জ্বলে ওঠে। প্রথমদিকে তারা সফলও হয় সরেনের দৃঢ়তা আর কুশলতায়। কিন্তু কতৃত্বশালীদের চক্রান্ত পিছু ছাড়ে না তাদের। লড়াইয়ে করুণ পরাজয় ঘটে সাঁওতালদের। নিহত হয় তাদের নেতা আলফ্রেড সরেন। ‘রাঢ়াঙ’ শেষ হয় আলফ্রেড সরেনের মৃত্যুদৃশ্য দিয়ে। আরণ্যক নাট্যদলের ৪০তম প্রযোজনায় ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের এক শ’ পঞ্চান্নতম প্রদর্শনী হয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বুধবার সন্ধ্যায়। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আরণ্যকের প্রাণপুরুষ বরেন্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, তমালিকা কর্মকার, চঞ্চল চৌধুরী, আখম হাসান, শামীম জামান, জয়রাজ, শামীমা শওকত লাভলী, আমানুল হক হেলাল, হাসিম মাসুদ, আরিফ হোসেন আপেল, সাজ্জাদ সাজু রুহুল আমিনসহ আরণ্যকের অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ। ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো এটি একটি সেটবিহীন নাটক। নাটকের সেট বলতে একটি মাত্র টুল। কোন প্রকার সেটের সহায়তা না নিয়ে নাটকটিকে এত সুন্দর করে মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে নির্দেশক মামুনুর রশীদ বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। নাটকে সেট না থাকার কারণে প্রত্যেক শিল্পীর ভাল অভিনয় করাটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নাটকের শিল্পীরা সে চ্যালেঞ্জ সফলভাবেই উতরে গেছে। এ ছাড়া নাটকটির একটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর সঙ্গীত ও কোরিওগ্রাফি। সাঁওতালদের নিজস্ব নাচ ও গান উপস্থাপিত হয়েছে একেবারে জীবন্তভাবে। নাটকটি মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। নাচ, গান আর স্মৃতি কথায় প্রয়াত বজলুর রহমানের ৭৬তম জন্মদিন উদ্যাপন ॥ নাচ, গান আর স্মৃতি কথায় সাংবাদিক প্রয়াত বজলুর রহমানের ৭৬ তম জন্মদিন উদ্যাপন করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়। রাজধানীর সেগুন বাগিচার কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মেলা মিলনায়তনে বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড.সরোয়ার আলী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের সভাপতি খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। এছাড়াও ছিলেন সাংবাদিক খন্দকার মনিরুজ্জামান, সোহ্রাব হাসান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বজলুর রহমান সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন তেমনি সাহসিকতার সঙ্গে তার পেশাগত দায়িত্বও পালন করে গেছেন। শিশুদের খুব ভাল বাসতেন। ফলে শিশুদের খুব কাছের এবং শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। অসম্ভব একজন রুচিশীল মানুষ ছিলেন তিনি। সব সময়ের জন্য অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাওয়ার সাহস যোগাতেন। একজন স্বাপ্নিক মানুষ ছিলেন। আগামী দিনগুলোতে বজলুর রহমানের মতো মানুষের স্বপ্ন আমাদের সাহস যোগাবে। ড.সরোয়ার আলী বলেন, আমি খুব ভাগ্যবান মানুষ এই অর্থে যে বজলুর রহমান আমার খুব কাছের একজন পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। চিরকাল একজন নিভৃতচারী ছিলেন। আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। বাংলাদেশের দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের পথিকৃৎ ছিলেন বজলুর রহমান। সোহ্রাব হাসান বলেন, বজলুর রহমানের আদর্শ, নীতি ও স্বপ্নকে আরেকবার প্রণোদিত করার চেষ্টায় এখানে হাজির হয়েছি। তিনি আমাদের রুচি ও সহিষ্ণুতা শিখিয়েছেন। সব সময় ধর্মনিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। নম্রকণ্ঠেও তার প্রতিবাদের ভাষা ছিল শাণিত। শুরুতে সম্মেলক কণ্ঠে ‘কাছের সবুজ, আলোর সবুজ আজকে তোমার জন্মদিন’ গান পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মেলার শিশুরা। পরে মেলার শিশু আদিব স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাসেম হুমায়ুন। আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মেলার শিশুদের পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মেলক কণ্ঠে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যদিয়ে সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনা করে শিশুরা। এরপর দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশন করে গান ‘আজ খুশির দিন তোমার জন্মদিন’। ‘আমরা সবাই রাজা’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে ছোট্ট শিশুদের দলীয় নৃত্য ছিল মনোমুগ্ধকর। উদীচীর অভিনয় কর্মশালা শুরু হচ্ছে ২৭ আগস্ট ॥ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ আয়োজিত তিন মাসব্যাপী প্রযোজনাভিত্তিক অভিনয়বিষয়ক নিয়মিত কর্মশালা শুরু হচ্ছে ২৭ আগস্ট থেকে। তিন মাসব্যাপী এ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশবরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ড. নিরঞ্জন অধিকারী, লাকী ইনাম, আফরোজা বানু, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, কামাল উদ্দিন কবির, আজাদ আবুল কালাম, আশীষ খন্দকার প্রমুখ। উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে জানানো হয়, এটি কর্মশালার চতুর্দশ আবর্তন। কর্মশালার আবেদপত্র উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় (১৪/২, তোপখানা রোড থেকে সংগ্রহ করা যাবে। জমা দেয়ার শেষ সময় ২৫ আগস্ট। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার চিলেকোঠা এবং শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের অভিক প্রকাশ থেকেও আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়া যাবে। আগামী ২৬ আগস্ট শুক্রবার সকাল দশটায় আবেদনকারীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করে বিকেলে যোগ্য ও বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ হবে। ২৭ আগস্ট শনিবার বিকেল চারটা থেকে শুরু হবে প্রযোজনাভিত্তিক অভিনয় কর্মশালার কার্যক্রম। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি নাটক নির্মাণ করা হবে।
×