ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

একটি দুর্ঘটনা ৬ কন্যার সারা জীবনের কান্না

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩ আগস্ট ২০১৬

একটি দুর্ঘটনা ৬ কন্যার সারা জীবনের কান্না

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক বিধবা মা। আর তাতেই আঁধারে ঢেকে গেল তার ৬ কন্যার ভবিষ্যত। রবিবার সন্ধ্যায় ট্রাক চাপায় পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কের ফ্যাক্টরিপাড়া মোড়ে আরজিনা বেগম (৪৫) নামে এক বিধবা নিহত হন। পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুরগামী একটি ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। নিহত আরজিনা মন্মথপুর ইউনিয়নের ছোট হরিপুর মুন্সীপাড়া গ্রামের মৃত মোফাখখারুল ইসলামের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল স্ত্রী ও ৬ কন্যাকে রেখে মারা যান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মোফাখখারুল ইসলাম। তার মৃত্যুতে লেখাপড়া ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন বড় দুই মেয়ে মুক্তা ও রিক্তা। তারা দুজনেই কাজ নেয় ঢাকার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। এতে তাদের লেখাপড়ার ইতি ঘটলেও বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ছোট ৪ বোনের পড়াশোনা ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহের ভার অতিকষ্টে বহন করছিল তারা। বর্তমানে মুক্তা (২৪), রিক্তা (২২) ও মোমিনা (১৮) তিন জনেই এখন বিবাহযোগ্য। এ ছাড়া ছোট বোন লিপি (১৩) ৮ম শ্রেণী, মমতাজ ( ১৫) নবম শ্রেণী ও মুসরাত জাহান ইতি ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ছে। ৩ জনেই মেধাবী ছাত্রী। এ মুহূর্তে তাদের শেষ অবলম্বন মাকে হারিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই এখন দিশেহারা। প্রতিবেশী মেনহাজুল হক বলেন, পরিবাররটির ৫ শতক বসতভিটা ছাড়া তাদের কোন আবাদি জমি নেই। মায়ের মৃত্যুর পর ছোট ৪ বোনকে বাড়িতে ফেলে রেখে বড় দুই বোন আবার চাকরিস্থলে ফিরে যাবে, নাকি চাকরি ছেড়ে ছোট বোনদের সাথে বাড়িতে অবস্থান করবে, এ নিয়ে উভয়সঙ্কটে পড়েছে বড় বোন মুক্তা ও রিক্তা। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত¡না দেয়ার মতো আপন আর কেউ নেই। মুক্তা ও রিক্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা- মার ইচ্ছা ছিল ৬ বোনকে শিক্ষিত করার। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তারা দু’বোন সংসারের হাল ধরেছিল। এখন অবিভাবকহীন হয়ে তারা কিভাবে বোনদের পড়ালেখা ও সংসার চালাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। মেধাবী স্বর্ণার স্বপ্ন চুরমার নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার থেকে জানান, দরিদ্র ভ্যানচালকের মেয়ে স্কুলছাত্রী স্বর্ণামনির জীবনের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে একটি দুর্ঘটনা। ২০১৫ সালের সাত ডিসেম্বর, মেধাবী ছাত্রী স্বর্ণামনি এসএসসি পরীক্ষার কোচিং ক্লাস শেষ করে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সায় সান্তাহার শহর থেকে গ্রামের বাড়ি শহর সংলগ্ন দমদমা ফিরছিলেন। সান্তাহার খাদ্য শস্য সাইলো সড়কে ওই অটোরিক্সার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে একটি মোটরসাইকেলের। এই দুর্ঘটনায় স্বর্ণার ডান পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। এরপর থেকে স্বর্ণার ভ্যানচালক পিতা হারনুর রশিদ স্বর্ণাকে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এর মাঝেই শুরু হয়ে যায় এসএসসি পরীক্ষা। অসুস্থ অবস্থায় স্বর্ণা দুটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে সে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তার অবস্থার অবনতি হলে ওই বছরের সাত ফেব্রুয়ারি তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় স্বর্ণার পায়ের হাড়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু স্বর্ণার ভ্যানচালক পিতার পক্ষে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। আর্থিক সমস্যার কারণে এক পর্যায়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি স্বর্ণাকে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা মতামত দেন স্বর্ণাকে বাঁচাতে হলে তার পা কেটে ফেলতে হবে। চিকিৎসকদের এমন সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়ে স্বর্ণা ও তার পরিবার। অবশেষে দুই মার্চ অপরেশনের মাধ্যমে স্বর্ণার ডান পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। ফলে থেমে যায় স্বর্ণার সামনে এগিয়ে চলার পথ। এরপরও থেমে নেই সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে স্বর্ণাকে বাঁচাতে তার শরীরে কমপক্ষে আটটি থেরাপি দিতে হবে। প্রতিটি থেরাপির খরচ ২৫ হাজার টাকা। স্বর্ণার ভ্যানচালক পিতার পক্ষে এত টাকার যোগান দেয়া অসম্ভব।
×