ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার এলএনজি ঘিরে বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২ আগস্ট ২০১৬

এবার এলএনজি ঘিরে বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কয়লার পর এবার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসকে (এলএনজি) ঘিরে বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। সরকার বলছে দেশে চারটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে আরও দুটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করা হয়েছে। সোমবার এক বৈঠকে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগকে সমন্বয় করে এলএনজিভিত্তিক প্রকল্পে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদসহ বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায় জ্বালানি বিভাগ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে চায়নি। এখন এলএনজি আমদানি সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা দেবে পেট্রোবাংলা। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএলকে পাইপ লাইন নির্মাণ করে দিতে বৈঠকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে রবিবার বিকেলের বৈঠকে জ্বালানি বিভাগ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয় না করার বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে। যাতে জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ারের প্রকল্পটির বিষয়ে দ্বিমত ছিল জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিশ্ব জ্বালানি পরিস্থিতিতে এলএনজিতে বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লার তুলনায় সামান্য বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু কয়লার চেয়ে এলএনজি প্রাপ্তি যেমন সহজ একই রকম পরিবহন ঝামেলা মুক্ত। এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয়ও কম। সাধারণ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মতোই কম জমির প্রয়োজন হয়। দেশে গ্যাসের বর্তমান মজুদের মাত্র আট টিসিএফ অবশিষ্ট রয়েছে। দেশের মোট প্রমাণিত মজুদ ২০ টিসিএফের মধ্যে ১২ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। দেশের জ্বালানি পরিস্থিতিতে যা বড় শঙ্কার কারণ। সরকার বলছে ২০৩০ সালেই বর্তমান মজুদ শেষ হয়ে যাবে। পেট্রোবাংলা বলছে নতুন ক্ষেত্র না পেলে আর আগামী বছর শেষের দিকে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন কমতে শুরু করবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করলে ২০২০-২২ সালের দিকে সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। গত কয়েক বছরে দেশের স্থলভাগে বড় কোন মজুদের খবর দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। আর বাইরে বাপেক্স যে দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ পরিচালনা করছে সেখানেও বড় কোন সুখবরের কথা কেউ বলছেন না। কেবল ভোলার পুরাতন গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ আগের ধারণার চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবিও কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে কূপ খননের আগে আগাম গ্যাস আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বিপাকে পড়েছে বাপেক্স। এলএনজি টার্মিনাল ॥ কক্সবাজারের মহেশখালিতে এলএনজিভিত্তিক একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য এক্সিলারেট এনার্জি ইউএসের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। এর বাইরে পেট্রোবাংলা আরও দুটো স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের কাছে আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে পাওয়ারসেল একটি টার্মিনাল নির্মাণ করছে। অন্যটি নির্ধারিত হয়নি। এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ এলএনজিভিত্তিক তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। এর মধ্যে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি খুলনায় ৭৫০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় একটি কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজির সরবরাহ নিয়ে পরিচালনা করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এলএনজি আমদানি, পাইপলাইন নির্মাণ এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার জন্য নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে গেছে। এর বাইরে দেশের বৃহৎ বেসরকারি কোম্পানি সামিট পাওয়ার এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। এমসিপি নামে অন্য একটি কোম্পানিও ৮৫০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। ভারতের প্রসিদ্ধ কোম্পানি রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে ৪ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার ওই প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। রিলায়েন্স সরকারকে বলছে তারা মহেশখালীর এলএনজি দেবে জাতীয় গ্রিডে। অন্যদিকে সরকার মেঘনাঘাট থেকে এই বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের সরবরাহ দেবে। প্রথম দফায় দুই হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। রিলায়েন্স তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত এলএনজি আমদানি করবে। নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর পর অবশিষ্ট এলএনজি সরকার কিনে নেবে। এলএনজি ক্রয় এবং মেঘনাঘাট থেকে গ্যাস দেয়ার বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল জ্বালানি বিভাগ। দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৪২ শতাংশ। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশে। দেখা যায় ২০০৯ সালে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন হতো ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এভাবে গ্যাসের সংস্থান কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার কমছে। বিদ্যুতের মূল্যহার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে জ্বালানির বহুমুখীকরণের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে এলএনজিকে বিকল্প বিবেচনা করেছে সরকার। জাইকা বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে তাতেও এসব কথা বলা হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে বাংলাদেশকে বিদ্যুত উৎপাদনে এলএনজি নির্ভরতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার পরিমাণ মোট গ্যাস ব্যবহারের ৭০ শতাংশ হবে। আর দেশীয় গ্যাস ব্যবহার হবে ৩০ শতাংশ। জাইকার করা খসড়া ২০৪১ সাল মেয়াদী মহাপরিকল্পনায় দেখা যায়, কয়লার ব্যবহার অন্তত ১৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
×