ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিহত আকিফুজ্জামান কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাতি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৯ জুলাই ২০১৬

নিহত আকিফুজ্জামান কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাতি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন স্টর্ম-২৬ এ নিহত নয় জঙ্গীর মধ্যে আটজনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে তিনজন বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের, তিনজন মাদ্রাসার এবং অপরজন নেয়াখালীর একটি কলেজের ছাত্র ছিল। নিহত জঙ্গীদের মধ্যে আকিফুজ্জামান খান তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের সাবেক গবর্নর কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাতি। বৃহস্পতিবার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এবং কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আকিফুজ্জামানের আঙুলের ছাপে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার দাদা মোনায়েম খান তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের সাবেক গবর্নর ছিলেন। আকিফুজ্জামান খানের বাবা সাইফুজ্জামান খান। মা শাহনাজ নাহার। ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করা এই যুবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর- ২৬১১০৬০০১০০৬। অভিজাত এলাকা গুলশান-১ এর ১০ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়ির ডুপ্লেক্স বাড়িটির মালিক নিহত জঙ্গী আকিফুজ্জামান খানের বাবা সাইফুজ্জামান খান। পরিবারের সঙ্গেই থাকত আকিফুজ্জামান। প্রায় ত্রিশ ফুট দূরে বাড়ির মূল ফটক। যা কফি রঙের। বাড়ির সামনের বিশাল খোলা জায়গায় পড়ে আছে পুরনো সাদা রঙের একটি গাড়ি। ওই বাড়িতে কলিংবেল টিপলে এক বৃদ্ধা বেরিয়ে আসেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় শুনেই কোন কথা না বলে ভেতরে চলে যান। বাড়ির পূর্ব দিকে আরও একটি গেট রয়েছে। সেটি বন্ধ। বাড়ির দক্ষিণ দিকে রয়েছে বিদেশীদের জন্য একটি বন্ডেন্ট ওয়ার হাউস। বন্ডেন্ট ওয়ার হাউসের বাসাটি নিহত জঙ্গী আকিফুজ্জামানের চাচার। বাড়িটির সামনেই (পূর্বপাশে) এ্যাবাকাস ক্যাফে এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। বাড়ির উত্তর পাশে হোমবাউন্ড কোরিয়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়। পশ্চিম পাশে গড়ে উঠছে নামকরা একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির অত্যাধুনিক ভবন। বাড়িটি পরিত্যক্ত। আকিফুজ্জামানের বাড়ির পাশের বাড়ির দারোয়ান আব্দুল গাফফার জানান, তিনি বেশ ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন। বাড়ির উত্তর পাশের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন মসজিদে যেতেন। খুব বেশি বন্ধুও ছিল না তার। প্রায় দশ মাস ধরে আকিফুজ্জামানকে আর বাড়িতে আসতে দেখেননি তিনি। বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। তবে কোন বিভাগের শিক্ষার্থী সেটা বলতে পারেননি। বাড়িতে শুধু ম্যাডাম থাকেন। আকিফুজ্জামান জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে নিহত হওয়ার খবরে বাড়িটি নিয়েই কৌতূহলে আছেন আশপাশের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এ ধরনের বাড়ি জঙ্গী আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হয় কিনাÑ তা খতিয়ে দেখা উচিত সরকারের। ওই বাড়িটি বর্তমানে বার হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। আকিফুজ্জামানের পিতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আকিফুজ্জামান তার ছেলে ছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি তার ছেলের ডিএনএ টেস্ট করাতে চান। প্রসঙ্গত, মোনায়েম খানের জন্ম ১৮৯৯ সালে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানাধীন হুমাইপুর গ্রামে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ১৯৬২ এর ২৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তাকে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর নিযুক্ত করেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গবর্নর থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাসহ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। আজীবন পাকিস্তানের জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেন মোনায়েম খান। তিনি ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবরে বনানীর বাসভবনে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের গুলিতে মারাত্মক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়
×