ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিলম্বে বোধোদয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৮ জুলাই ২০১৬

বিলম্বে বোধোদয়

বিলম্বে হলেও বোধোদয় যে হয়েছে, তা অভিনন্দনযোগ্য। চোখ-কান বন্ধ রেখে একদেশদর্শী হলে অনেক সত্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা যায় না। বরং কল্পনাশ্রয়ী কথা এসে ধরা দেয়। আর তা নিয়ে হাঁকডাক, হৈ-হল্লোড়ের কমতি থাকে না। জঙ্গীবাদ বিকশিত হওয়ার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় যে সন্ত্রাসবাদী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং, আত্মঘাতী হত্যাকা- চালিয়ে আসছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি কম ছড়ানো হয়নি। গোয়েন্দা তথ্য তাদের ভা-ার যাদের ভরপুর, তারা বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে, সত্যকে এড়িয়ে অযথাই বাংলাদেশে আইএস জঙ্গী রয়েছে বলে ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রবে বছরখানেকের বেশি সময় ধরে চিৎকার করে আসছিল। বিশ্বজঙ্গী ও বাংলাদেশী জঙ্গীদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে এটা তারা কিছুতেই বুঝতে চাইত না। কিংবা না বোঝার ভান করত হয়ত। যে কারণে এ দেশের মানুষের কাছে তাদের বৈসাদৃশ্যপূর্ণ মনে হচ্ছে। তার আলামত জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে দেখা গেছে। এমনটা তো মনে হয়েছেই যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী; যাকে যুক্তরাষ্ট্র মডারেট ইসলামী দল হিসেবে মূল্য দিয়ে আসছে, তবে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকার শীর্ষে রেখেছে। তাদের অপতৎপরতা, জঙ্গী অর্থায়ন, পৃষ্ঠপোষকতাদান, অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণের কাজটি যে তাদের পক্ষেই সম্ভব, সেটা তাদের কাছে হয়ত দৃশ্যমান হয়। কিন্তু প্রকাশটা বিপরীত। সেই নব্বই দশকের শুরুতেই জঙ্গী প্রশিক্ষণ বিষয়টি আলোচনায় আসে। এদের রাজনৈতিকভাবে প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। জামায়াতকে এদেশে পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতার অংশীদার করেছে এই বিএনপি পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে। তাই তাদের সখ্য অনেক পুরনো এবং গভীরতর। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ দিয়ে রেখেছে। দেশে আইএস আছে বলে তারা কি আসলে জামায়াতকে আড়াল করে আসছে, এমন প্রশ্ন উদয় হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টিতে জামায়াতী কর্মকা- যে ভূমিকা রাখছে, সে সত্যটা তারা উচ্চারণ করছে না। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার এ দেশীয় গণদাবি সম্পর্কেও তারা নীরব। কিন্তু এ দেশ ‘জঙ্গীবাদের চারণক্ষেত্রে’ পরিণত হোক এমনটা নিশ্চয় যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ সাম্প্রতিক অতীতকালের বিভিন্ন দেশে তাদের ভূমিকা, জঙ্গী সৃষ্টিতে অবদান, আশঙ্কা বাড়ায়। ইরাক ও লিবিয়াতে হামলা চালানো যে ভুল ছিল এবং তথ্যও ছিল ভুল এখন এ কথা উচ্চারণ করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যও। বাংলাদেশে যে আইএস নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার যে দাবি করা হচ্ছে, তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এখন আর দ্বিমত নেই। তবে একটি মহল এ দেশে জঙ্গীবাদকে উস্কে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট। অবশেষে স্বীকার করলেন আইএস নয়। তার সেই একটি মহল যদি জামায়াত-বিএনপি হয়, তবে বোঝা যাবে তারা বিলম্বে হলেও সত্যানুসন্ধান করতে পেরেছেন। কিছু লোক যে এদেশীয় তরুণদের জঙ্গীবাদে প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করছেÑ এমন উপলব্ধি বার্নিকাটের। জঙ্গীবাদ নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করলে জঙ্গী নির্মূল কঠিন হবে না।
×