ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চৌদ্দ বিদেশী এনজিও জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৫ জুলাই ২০১৬

চৌদ্দ বিদেশী এনজিও জঙ্গী  অর্থায়নে জড়িত

রহিম শেখ ॥ দেশে অন্তত ১৬শ’ এনজিও যাদের কার্যক্রম চলছে বিদেশী ফান্ডে। এর মধ্যে অধিকাংশ এনজিও রয়েছে ধর্মভিত্তিক। চালাচ্ছে নানামুখী কর্মকা-। করছে জঙ্গী অর্থায়ন। সূত্র মতে, এনজিওগুলো বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুদান সংগ্রহ করে। এ অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য সরকার জানে না। গোয়েন্দা তথ্য মতে, ১৪টি বিদেশী এনজিওর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদে অর্থায়নের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। অন্যদিকে দেশের অর্ধশত এনজিও বিদেশ থেকে ফান্ড এনে জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে এখন পর্যন্ত কোন এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি। তদারকি সংস্থা এনজিও ব্যুরো বলছে, অনিয়ম, জঙ্গী অর্থায়নের প্রমাণ মিললেই তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় সাত হাজার এনজিওকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। এনজিওগুলোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা আসে বাংলাদেশে। তবে সংস্থাগুলোর অর্থ ব্যয়ের সঠিক হিসাব নেই খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে। এসব টাকা জঙ্গী তৎপরতার কাজে ব্যয় করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এনজিও ব্যুরোর তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বিদেশী ফান্ডে পরিচালিত ২ হাজার ৯১টি এনজিও নিবন্ধন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে ৪৮৪টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এরপর আর কোন এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি বলে এনজিও ব্যুারো জানিয়েছে। তথ্য মতে, বিদেশী ফান্ডে পরিচালিত এনজিওগুলো বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুদান সংগ্রহ করে। এ অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য সরকার জানে না। সম্প্রতি আইন সংশোধন করে এনজিওর বিদেশী অনুদানপ্রাপ্তি কঠিন করা হলেও দেশ-বিদেশ থেকে জঙ্গী অর্থায়নের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, ১৪টি বিদেশী এনজিওর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এসব এনজিও হলো ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন (আইআইআরও), কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি, মুসলিম এইড, দার আল-খায়ের, কুয়েতভিত্তিক এনজিও রিভাইবাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (আরআইএইসএস), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী, সোসাইটি অব সোশ্যাল রিফর্ম, কাতার চ্যারিটেবল সোসাইটি, আল মুনতাদা আল ইসলামী, ইসলামিক রিলিফ এজেন্সি, আল ফুরকান ফাউন্ডেশন, তাওহিদি নূর, সৌদি আরবভিত্তিক হায়াতুল ইগাছা এবং দ্য গ্রিন ক্রিসেন্ট। এসব এনজিওর মাধ্যমে দেশে কোটি কোটি এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের আলোকে জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত এনজিওর কার্যক্রম কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪টি এনজিওর নামের তালিকাসংবলিত একটি প্রতিবেদন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে ১৪ বিদেশী এনজিওর ওয়েবসাইটে দেয়া বাংলাদেশ অফিসের ঠিকানায় খোঁজ করে কোনটারই হসিদ পাওয়া যায়নি। রবিবার মুসলিম এইড-ইউকে বাংলাদেশ ফিল্ডের বনানী অফিসে গিয়ে এ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিতে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন এনজিওর বনানীর ১৩ নম্বর রোডে অবস্থিত দেয়া ঠিকানায় এ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের বারিধারার অফিসের ঠিকানায় গিয়ে জানা গেল, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (সিসিডিবি), এ্যাডভানটেজ ক্রুশ অব বাংলাদেশ, হিউম্যানিট্রেইন ফাউন্ডেশন, ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান ক্রুশ, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা, শান্তিরানী ক্যাথলিক চার্চ, জাইনপাড়া আশ্রম, গ্রিনহিল, তৈদান, আশার আলো, মহামণি শিশু সদন, কৈনানিয়া ও তৈমুর নামীয় এনজিওর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগও খতিয়ে দেখছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে এত তথ্যপ্রমাণ থাকলেও সেগুলো যাচাইয়ে মাঠে নামেনি এনজিও ব্যুরো। অন্যদিকে অনেক এনজিও পর্যবেক্ষণে রাখার কথা বলা হলেও কার্যত এর কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গীদের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে টাকা আসছে। এর একটি অন্যতম বিদেশী ও দেশী এনজিওর অর্থায়ন। জঙ্গী অর্থায়নকারী কে বা কারা, তা শনাক্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। জানা গেছে, জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে এখন পর্যন্ত কোন এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি। এনজিও ব্যুরোর পরিচালক কেএম আব্দুস সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বেশ কিছু এনজিওকে নজরদারিতে রেখেছি। তাদের খুঁটিনাটি তথ্য নিচ্ছি। হিসাবে গরমিল আছে কিনা, অর্থ কোথায় ব্যয় হয়, সে হিসাব রাখছি। অনিয়ম, জঙ্গী অর্থায়নের প্রমাণ মিললেই তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। সংস্থাটির জনবলের অভাবের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ভাল কিছু করতে। কিন্তু জনবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এই ক্রাইসিস মুহূর্তেও আমরা যেটুকু করছি তা সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে খুবই কম। তাছাড়া উপযুক্ত প্রমাণ না পেলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারি না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করেছি আমরা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে বেশ কিছু এনজিওকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। তবে নিশ্চিত কোন অভিযোগ এখনও পাইনি। তিনি বলেন, অভিযোগের তালিকায় থাকা রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটির (আরআইএইসএস) পুনর্নিবন্ধনে আমরা কালক্ষেপণ করেছি। নির্ধারিত সময় পর এটি বাতিল হয়ে গেছে। রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর কার্যক্রম নেই। সক্ষমতা ও দক্ষ জনবলের অভাবের কথা জানিয়ে মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা কিন্তু বসে নেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আমরা এনজিওগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছি। প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে বিদেশী অর্থায়নপুষ্ট এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছি। কারা নজরদারি করছেন- এর কোন সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও এনজিও ব্যুরোর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে তদারকি করাচ্ছি। কেন্দ্র থেকে মাঝে মাঝে এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ে জেলাভিত্তিক কর্মশালা হচ্ছে। এসব কর্মশালায় এনজিওগুলো যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে জঙ্গী অর্থায়ন করতে না পারে, তা অবহিত করা হচ্ছে। এর বাইরে নজরদারি করতে তেমন কোন দক্ষ জনবল এনজিও ব্যুরোর নেই।
×