ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষে গোলাগুলি, অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ জুলাই ২০১৬

চবিতে ছাত্রলীগের  দু’পক্ষে গোলাগুলি,  অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি

চবি সংবাদদাতা ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে সহিংসতা অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার মধ্যরাতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়েন কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাকর্মীরা। রাতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে ৩৫ থেকে ৪০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এ ঘটনায় পদবঞ্চিত পক্ষের আন্দোলনকারী আবির ইকবাল নামে এক ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন। পদবঞ্চিতদের লাগাতার অবরোধের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। অবরোধের কারণে শাটল ট্রেন চলাচল না করায় শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে আসতে ভোগান্তির শিকার হন। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ফলে দাফতরিক কাজ চললেও অনুষ্ঠিত হয়নি ক্লাস-পরীক্ষা। আর এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে গোলাগুলির খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর টিপু ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় মিছিলসহকারে তাকে স্বাগত জানিয়ে শাহজালাল হলের দিকে নিয়ে যান তার অনুসারীরা। একই সময়ে সোহরাওয়ার্দী হল এলাকা থেকে আমানত হলের দিকে পদবঞ্চিতরা এগিয়ে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে শাহজালাল ও শাহ আমানত হল থেকে কমিটিতে পদ পাওয়া অন্য নেতকর্মীরা বেরিয়ে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী চলা এ গোলাগুলিতে উভয়পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এ সময় আবির ইকবাল নামে এক ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হলে প্রথমে তাকে চবি মেডিক্যাল সেন্টার এবং পরবর্তীতে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাকর্মীরা শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে এবং পদবঞ্চিতরা শহীদ আব্দুর রব হলে অবস্থান নেয়। এ বিষয়ে চবি পুলিশ ফাঁড়ির মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, ‘মধ্যরাতের ঘটনা হওয়ায় আমাদের ফোর্স কম ছিল। পরবর্তীতে অতিরিক্ত ফোর্স আসার পর আমরা তাদের নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’ অন্যদিকে, অবরোধের সমর্থনে নগরীর ষোলোশহর রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে পদবঞ্চিতদের একটি অংশ। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে পদবঞ্চিতদের আরেকটি অংশ। আর চলমান অবরোধে নিরাপত্তাজনিত কারণে চবি রুটে শাটল না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে বৃহস্পতিবারও চবিতে ট্রেন চলাচল ছিল বন্ধ। তবে বুধবার শিক্ষক বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার শিক্ষক বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ষোলোশহর স্টেশন মাস্টার সাহাব উদ্দিন জানান, বুধবার অবরোধ চলাকালে এক ট্রেনচালক আহত হয়েছেন। পুলিশের একজন এসআইও আহত হয়েছেন। তাই নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এ রুটে ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবারও কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। চবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর টিপু বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা শাহজালাল হলের দিকে যেতে চাইলে আন্দোলনকারীরা অতর্কিতভাবে জঙ্গীদের মতো আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমাদের ছেলেরা তাদের প্রতিহত করলে তারা পালিয়ে যায়।’ নবগঠিত কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘সভাপতি ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকার পরও তার কিছু পদলেহনকারী কর্মী কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পদবঞ্চিতদের পক্ষের আন্দোলনকারী এক ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আমরা এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং কমিটি পুনর্গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
×