ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সচেতনতা ও প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২২ জুলাই ২০১৬

সচেতনতা ও প্রতিরোধ

জঙ্গীবাদ একটি ভ্রান্ত মতাদর্শ। এই আদর্শধারীরা মানুষ হত্যা ও সম্পদ বিনষ্ট করার মধ্যেই তাদের কর্মকা- চালু রাখে। সন্ত্রাসকে তারা তাদের প্রধান উপজীব্য করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে তৎপর। এদের কোন ধর্ম নেই, নেই নৈতিকতা এবং মানুষ হিসেবে নেই পরিচয়। এরা মূলত নরঘাতক। সারাবিশ্ব আজ জঙ্গীবাদের রক্তপিপাসু লোলুপতার মুখোমুখি। একেক দেশে একেক কারণে জঙ্গীবাদ প্রসার লাভ করছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদ ক্রমশ জঙ্গীবাদে রূপান্তরিত হয়ে ‘টার্গেট কিলিং’ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে বিভিন্ন সময়ে এরা রাজনৈতিক দলের অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচী পালনের নামে পেট্রোলবোমা ও আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে দেড় শতাধিক পুলিশ ও মানুষকে হত্যা, সহস্রাধিককে দগ্ধ ও আহত করেছে। বিনষ্ট করেছে প্রচুর সম্পদ ও স্থাপনা। স্বাভাবিক জীবনের সমস্ত আয়োজনকে পদদলিত করে জঙ্গীরা জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট হয়ে বেপথু হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত ও সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে মানুষ হত্যায় নেমেছে ওরা একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, ইসলামী ছাত্র সংঘ, আলশামস ও জামায়াতের পথ ধরে। এদের নির্মূল করার কাজটি অতীতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অবহেলা, অদক্ষতা, ইত্যাকার কারণে জঙ্গী নির্মূল না হয়ে প্রসারণ ঘটেছে। জঙ্গীদের ক্রমবিস্তারকে গ্রাহ্য করা যেমন হয়নি, তেমনি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। গত পাঁচ বছরে বহুসন্ত্রাসী ও জঙ্গী যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার হত্যাযজ্ঞে নেমেছে। আটকদের কাছ থেকে কোন তথ্য আদায় করা যায়নি, হয়ত নিজেদের বিষয় সম্পর্কিত অজ্ঞতার কারণে। প্রশাসন যেমন, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোও ছিল এদের বিষয়ে নির্বিকার। তেমন গুরুত্ব পেয়েছে জঙ্গী নির্মূলের বিষয়ে, বলা যাবে না। তথাপি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়শই জঙ্গীদের আটক করেছে। কিন্তু দুর্বল মামলার এজাহার, জব্দকৃত আলামত, অভিযোগপত্রে ত্রুটি থাকা, দুর্বল তদন্ত, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গীরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে জামিন পেয়েছে পাঁচ শতাধিক জঙ্গী। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সশস্ত্র ব্যক্তিরা ধরা পড়লেও তাদের ছাড়িয়ে নিতে যারা দেনদরবার করেন, তাদের চিহ্নিত করা হয়নি। এমনকি জঙ্গীদের জামিন পাওয়ার জন্য সরকারী দল সমর্থক বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আইনজীবীরা যখন দাঁড়ান, তখন স্পষ্ট হয়, জঙ্গীবাদ সম্পর্কে তাদের ধারণা কত সাধারণ স্তরের এবং গুরুত্বহীন। দেশপ্রেমের চেতনা ও বিবেকবোধ লুপ্ত না হলে জঙ্গীর পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কাজটি সম্ভব নয়। সরকারী পিপিরাও এদের জামিনের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে সক্রিয় হন না দুর্বল তদন্ত রিপোর্টের কারণেও। অনেক সময় জঙ্গীরা তথ্য গোপন করেও আদালত থেকে জামিন নিচ্ছেন। কোন্্ আদালতে জামিন আবেদন ও শুনানি হচ্ছে, তা এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় জানেও না। জানার কোন ব্যবস্থাও তারা গড়ে তোলেননি। দেরিতে হলেও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এখন বোধোদয় জেগেছে যে, জঙ্গীদের জামিন ঠেকাতে একটি সমন্বয় সেল দরকার। এতে জামিন ঠেকানোর যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে মনে করা হচ্ছে, এতে জঙ্গীদের বিষয়ে পর্যালোচনা করা যাবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। সুতরাং তদারকি দ্রুত করা উচিত। জঙ্গী নির্মূলে সর্বাত্মক অভিযান চালানো প্রয়োজন দেশজুড়েই। বগুড়ার সারিয়াকান্দির দুর্গম চরে জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও দেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর খিলগাঁও ও সীতাকু-ের পাহাড়েও রয়েছে জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাড়িভাড়া নিয়ে জঙ্গী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নগরীর প্রতি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সদস্যদের সমন্বয়ে থানা প্রশাসন এসব আস্তানার খোঁজ নিতে পারে। জঙ্গী আস্তানা ও জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করে এদের সমূলে উৎখাতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জঙ্গীবিরোধী চলমান তৎপরতায় দেশবাসী অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। একে সফল করাই হলো প্রধান লক্ষ্য।
×