ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে আসুন কাপ্তাই লেক

পাহাড় নদী প্রকৃতি-অফুরন্ত সৌন্দর্য, নৌবিহারে আনন্দ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ জুলাই ২০১৬

পাহাড় নদী প্রকৃতি-অফুরন্ত সৌন্দর্য, নৌবিহারে আনন্দ

মাকসুদ আহমদ ॥ প্রকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে। নদী বয়ে চলেছে পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে। উঁচু পাহাড়ও যেন উঁকি দিয়ে দেখছে নদীর গতিপথ। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁর অপার মহিমা এখানে এসে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে। চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র থেকে যে কোন সময় শত ব্যস্ততার মাঝেও মাত্র একটি দিনের জন্য ছোট্ট জলযানে ঘুরে আসা যায় কর্ণফুলী নদী হয়ে কাপ্তাই লেক পর্যন্ত। চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে নৌপথে বিভিন্ন স্পটে ঘুরে আসার সুযোগও রয়েছে অফুরান। আর সে রকমই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ‘চলো দেখে আসি প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য’- এই সেøাগান সামনে নিয়ে একদল পর্যটক রেব হয় নৌবিহারে। চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে নৌপথে ঘুরে আসা যায় কাপ্তাই সøুইসগেট পর্যন্ত। সম্প্রতি এমনি এক জমকালো নৌবিহারে অংশ নিয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার কিছু উৎসাহী ছেলে-মেয়ে। জোয়ার ভাটার টানে এ ধরনের আনন্দ-ভ্রমণ সময়ের ওপর নির্ভরশীল। জোয়ারের টানে পৌঁছালে ভাটার টানে ফিরে আসা অনেকটা সহজ হয়। সময় এদিক-সেদিক হলেই বেগ পেতে হয় পর্যটকদের। তবে এ ধরনের প্রমোদ ভ্রমণে সাঁতার জানলে ভাল, না জানলে বিপদ ঘোরে মাথার ওপর! সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে অর্ধশত টিনএজ্ড ছেলেমেয়ে এসে জড়ো হয়েছিল আকবর শাহ এলাকায়। সেদিন আনন্দের গতিধারা যেন উপচে পড়ছিল। বাসে চড়ে প্রথমে আকবর শাহ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত। তারপর সেখান থেকেই ইঞ্জিন নৌকায় কয়েক ঘণ্টার আনন্দ ভ্রমণ মধ্যাহ্ন বিরতি নেয় রাঙ্গুনীয়ার কোদালা টি গার্ডেনের ঘাটে। ব্র্যাকের পরিচালনায় এই চা বাগান যেন প্রকৃতির অনাবিল পরশ দিয়েছে পাহাড়, নদী আর ছায়াঘেরা মেঠোপথে নানা বয়সী পর্যটকদের। এক সময় এই আনন্দধারা শেষ হয় যাত্রা শুরুর স্থানে এসে। ঘুরে বেড়ানোর সময়-সুযোগ কাজে লাগাতে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার পালা যেন ফুরোতে চায় না। তবে ঘুরে বেড়ানোর বিনোদন স্পটটি যদি হয় প্রকৃতিঘেরা, সেক্ষেত্রে আনন্দের মাত্রাও হয় অনেক বেশি। ছুটে চলা পর্যটকদের ভিড়ে সারা বছর ধরে উঁকিঝুঁকি মারা পর্যটন স্পটগুলো যেন টইটু¤ু^র হয়ে যায়। তাই আনন্দের অসীম ধারায় পর্যটকরাও অভিভূত নান্দনিক স্পটকে ঘিরে। একদল দুরন্ত পর্যটক সম্প্রতি এখানে নৌভ্রমণে এসে নিজেদের দেহ-মনের ক্লান্তি মুছে ফেলবার চেষ্টায় মেতে উঠেছিল। একের পর এক আসা প্রায় অর্ধশত তরুণ-তরুণীর ভিড়ে নগরীর সদরঘাটস্থ মেরিন ফিশারিজ ঘাট যেন সেদিন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। সূর্যোদয়ের পর সাধারণত এ ধরনের চিত্র দেখা যায় না। এখানকার সুনসান নিরিবিলি পরিবেশ যেন কিছুক্ষণের জন্য হয়ে ওঠে কোলাহলময়। যাত্রার শুরুতেই নৌকার মাঝি অনেকটা অবাক চোখেই দেখলেন একসঙ্গে এতগুলো টিনএজ্ড ছেলেমেয়ে হুরমুর করে এসে অবস্থান নেয় তার নৌকায়। প্রায় ২শ’ যাত্রীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ নৌকায় মাত্র অর্ধশত উচ্ছল-চঞ্চল যাত্রীর উপস্থিতি তার কাছে অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। যাত্রার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সকালের নাস্তা। কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু পার না হতেই আরেক দফায় খাওয়ার পালা। জোয়ারের টানে নৌকা ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যে। পর্যটকরা হঠাৎ করেই যেন কয়েক মিনিটের জন্য নৌকার ভেতরে অবস্থান নিয়েছিল পানিতে ডুবে যাবার আতঙ্কে। এরপর ভয় কেটে গেলে সবাই উঠে আসে ছাদে। কিন্তু নৌকার গতি আর বঙ্গোপসাগরের জোয়ার গিয়ে ঠেকেছে কর্ণফুলীতে। সমুদ্রের জোয়ারে নদীর গতি প্রবাহ বয়ে চলেছে উজানের দিকে। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মূলত মিশে রয়েছে পাহাড়, নদী আর লেকের ধারা। প্রকৃতি যেন তার অনাবিল সৌন্দর্য কর্ণফুলীকে অর্ঘ্যস্বরূপ বিলিয়ে দিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর নৌকা গিয়ে ঠেকল রাঙ্গুনীয়ার কোদালা টি গার্ডেনের ঘাটে। এরই মাঝে ভ্রমণে আসা দলছুটরা নৌকার আসন ছেড়ে ছাদে অবস্থান নেয়। সকলের নাচ, গান আর আনন্দের ঘনঘটা যেন মাঝিকেও তার অজান্তেই মাতোয়ারা করে তোলে। এই ফাঁকে কেউ সেল্ফি আবার কেউবা ডিজিটাল ক্যামেরায় প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে ছবি তোলার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করে। এছাড়া অনেকে ধারণ করেছে ভিডিও ক্লিপও। কোদালা টি গার্ডেনের আয়তন প্রায় ১ হাজার ৬ দশমিক ২৬ হেক্টর। ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে চলছে টি গার্ডেনটি। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে যেমন রয়েছে পায়েচলা মেঠোপথ, আবার টি গার্ডেনের ভেতর দিয়ে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অনতিদূরে চলে গেছে পাকা সরু রাস্তা। তবে টি গার্ডেনের গাছগুলো যেন ধারালো অস্ত্রে ছাঁটা। শীতের ক্রান্তিলগ্নে চা গাছের ডালপালা ছেঁটে দেয়া হয় নতুন পাতা গজানোর জন্য। অবশেষে টি গার্ডেন ও প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য পাহাড় আর নদীর মিলনস্থল ছেড়ে আসার সময় ফুরিয়ে এলে আবারও এরা সবাই এসে নৌকায় চেপে বসে। শুরু হয় মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন। দিনের শেষে অর্থাৎ সূর্যাস্তের আগ মুহূর্তে পূর্ব আকাশ যখন রক্তলাল আভায় ভরে ওঠে, ঠিক তখনই সবার মনে বেজে ওঠে নীড়ে ফিরবার সুর।
×