ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শেকড় খুঁজে বের করা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৮ জুলাই ২০১৬

শেকড় খুঁজে বের করা

চলতি মাসের প্রথম দিন রাজধানীর গুলশানের একটি স্প্যানিশ রেস্তরাঁয় ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলার দু’দিন পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ওই হামলায় সাত জাপানী নাগরিক নিহত হন। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছিলেনÑ সন্ত্রাসীদের শেকড় অবশ্যই খুঁজে বের করব। এবার তার সরকারের এই দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করলেন এক আন্তর্জাতিক সম্মেলেনে। গত শুক্রবার মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে আসেম সম্মেলনের সাইডলাইনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেনÑ গুলশান হামলার শেকড় খুঁজে বের করব। জাপানের প্রধানমন্ত্রীও বৈঠকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান তার একাত্মতার দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যক্ত করেন। জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী। জাপানের নাগরিকবৃন্দ যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছেন তাদেরসহ জনগণকে নিরাপদে রাখা ও তাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে নিশ্চিত করেন। গুলশানের জঙ্গী হামলায় ইতালির ক’জন নাগরিকও নিহত হন। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এবং তার জনগণের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পর পর দুটি জঙ্গী হামলার ঘটনায় অনেক প্রশ্নই সামনে চলে এসেছে। জঙ্গী মোকাবেলায় করণীয় এবং সক্ষমতা সম্পর্কেও পর্যালোচনার তাগিদ তৈরি হয়েছে। সরকার জঙ্গী দমনে বরাবরই সোচ্চার। সরকারপ্রধান জঙ্গী দমনে বার বার তার প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। নিজ কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালেও প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দৃঢ় বক্তব্য প্রদান করেন। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছেন, জঙ্গীবাদ নির্মূলে সরকারকে যত কঠোর হতে হয় ততটাই হবে। এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে সরকার জঙ্গী প্রতিরোধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারই প্রক্রিয়া হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেয়া হচ্ছে তাদের। জঙ্গী হামলা মোকাবেলায় এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে কার্যকর হবে। এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবের কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মস্কো থেকে প্রয়োজনীয় যে কোন প্রকার সহযোগিতা গ্রহণে কখনও বাংলাদেশ পিছপা হবে না বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত সংঘটিত জঙ্গী হামলার পেছনে জেএমবি, হরকত-উল-জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীরসহ দেশীয় জঙ্গী সংগঠনগুলোই প্রধানত দায়ী। তাদের পেছনে জামায়াত-বিএনপি-শিবিরসহ ধর্মীয় দলগুলোর সমর্থন ও ইন্ধন থাকাও বিচিত্র নয়। এটা তো দিবালোকের মতো সত্য যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বিচার ও মৃত্যুদ- কার্যকরকে উপলক্ষ করে দেশে জঙ্গী হামলা ও হত্যাকা- বেড়েছে। জঙ্গীবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। আমেরিকা, ফ্রান্স, তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বহু দেশেই জঙ্গী হামলা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে। শেকড়সুদ্ধ তাদের উপড়ে ফেলা চাই দেশের স্বার্থে। তা না হলে এরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত করে ছাড়বে। সময় এসেছে জঙ্গীবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর। সরকার সন্ত্রাসী হামলাকারীদের শেকড় খুঁজে বের করার ব্যাপারে যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে চলেছে তাতে দেশের মানুষ যেমন আশ্বস্ত বোধ করবে, তেমনি বহির্বিশ্বেও সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বেÑ এটা নির্দ্বিধায় বলা চলে।
×