ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বসেরা

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৩ জুন ২০১৬

বিশ্বসেরা

বৈশ্বিক উন্নয়ন পেতে নতুন ও কার্যকর কলাকৌশলের অভাব নেই। বরং এর কার্যকারিতা, ফলপ্রসূতা ও বিস্তারের ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারলেও অভাবিত ফল পাওয়া যায়। এভাবে লাখ লাখ মানুষের কাছে সামাজিক উন্নয়ন পৌঁছানো সম্ভব। সরাসরি উন্নয়ন, অগ্রগতির পাশাপাশি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা যদি পরিকল্পিতভাবে নিবিষ্ট মনে কাজ করে তবে সমৃদ্ধির চূড়া আরও উঁচু হবে। দারিদ্র্য বিমোচন করে একটি সচ্ছল অবস্থান তৈরি করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের জন্য দুহাত বাড়িয়ে দেয়ার মধ্যে যে মানবিকতার প্রকাশ ঘটে, সেখানে মানুষকে কর্মঠ, পরিশ্রমী, সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল, বিভিন্ন পরিধিতে গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সর্বত্র সহজ নয়। কম সম্পদ ও স্থানের দেশে বিপুল জনসংখ্যার ভার দুঃসহ বৈকি! তদুপরি যদি দেশটি হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠাÑ তবে দারিদ্র্য মাথাচাড়া দেয় বৈকি! সেই দারিদ্র্য থেকে মানুষের জীবনে উত্তরণ ঘটানোর কাজটি বেশ দুরূহ। তারপরও থেমে থাকে না। কেউ না কেউ এগিয়ে তো আসেই। নিষ্ঠা, কর্মকুশলতা সততা তাকে এগিয়ে দিতে বাধ্য। মানুষের জন্য মানুষ ভাবনাটা তীব্র হলেই তবে সামাজিক উন্নয়নে একনিষ্ঠ হওয়া সম্ভবপর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিদেশী বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা তথা এনজিও পুনর্বাসন কাজে এসেছিল। তাদের পাশাপাশি তখন দেশী এনজিও কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭০ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর পর বেশ কিছু বিদেশী সাহায্য সংস্থা এদেশে এসেছিল। সে সময়ই ভ্রƒণ জন্মে একটি বেসরকারী সংস্থার। বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে শুভযাত্রা ঘটে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটি বা ব্র্যাকের। মুক্তিযুদ্ধের ফসল বলা যায় একে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বিপর্যস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয় ব্র্যাক। ক্রমশ ডালপালা বিস্তৃত হওয়ার নামকরণ হয় বাংলাদেশ রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি। পঁয়তাল্লিশ বছরের ব্যবধানে সংস্থা থেকে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত শুধু নয়, অতিকায় মহীরুহে পরিণত হয়েছে। নিজের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই ছোট্ট প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিওর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বারোটি দেশে তার কার্যক্রমও বিস্তৃত। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া, আফ্রিকার তেরো কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও তারা পুনর্বাসন কর্মসূচীতে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কর্মীরা তালেবানদের হাতে অপহৃত ও পরে ছাড়া পাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগে এাণ প্রদানসহ অন্যান্য খাতেও কাজ করছে ব্র্যাক। কাজের নমুনা হিসেবে তার খ্যাতি ও সনদপ্রাপ্তি। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন প্রভাব; নতুন ধারা প্রবর্তন ও টেকসই উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর আন্তর্জাতিক শ্রেণীতে ব্র্যাক সেরা সম্মানটি পেয়েছে। এটা তার প্রাপ্য ছিল। সেরা পাঁচ শ’ উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে নিরীক্ষা চালিয়ে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ অর্জন ব্র্যাকের জন্য যেমন, তেমনি এনজিওর জন্য একটি বিরাট সম্মানের ব্যাপার। সংস্থাটির কর্মকা- সম্পাদন বিষয়ে দেশে ব্যাপক মানুষ অবহিত। দেশে আরও বহু এনজিও থাকলেও তারা বেশি দূর যেতে পারে না। ব্র্যাক পেরেছে। সেইই তার প্রাপ্য অর্জন।
×