ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্ন যখন জীবন রক্ষার

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২২ জুন ২০১৬

প্রশ্ন যখন জীবন রক্ষার

বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধ শিল্প তার অন্যতম। বর্তমানে এই শিল্প খাতটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৬ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। তবে একথাও সত্যি যে, বেশ কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পাানিও আছে, যারা তৈরি করছে মানহীন ওষুধ। কোন কোন কোম্পানির ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানা বন্ধ করেও দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ওষুধশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। এই কমিটি মোট ১৪২টি ওষুধ কোম্পানির কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রথম প্রতিবেদন দাখিল করে। এর ভিত্তিতে কয়েকটি কোম্পানিকে সতর্ক করা হয়। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আরও একটি প্রতিবেদন দেয়া হয় ২০১৩ সালে। এ পর্যায়ে মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যর্থ ৮৪টি কোম্পানিকে চিহ্নিত করা হয়। সর্বশেষ পরিস্থিতি বিচার করে আরও একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয় চলতি বছরের ২০ এপ্রিল। এর ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০টি ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের জন্য দায়িত্ব প্রদান করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে। এর পাশাপাশি ১৪টি কোম্পানিকে এ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে বাস্তবতা হলো, সরকারী কাজকর্ম, আদেশ-নির্দেশ সবই চলে ঢিমেতালে। দুর্নীতি-অনিয়মসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কম নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ঔষধ প্রশাসনের নির্দেশনা পালনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর গড়িমসিও লক্ষণীয়। আর সে কারণেই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। অতঃপর আসে ১০টি কোম্পানিকে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ এবং ১৪টি কোম্পানিকে এ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ। অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর নামও ছাপা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এখন তারা কী করে, সেটাই দেখার বিষয়। ওষুধ শিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল, নকল বা মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটি আদর্শ উদাহরণ। আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইএসও সনদের বিষয়টিও উপেক্ষা করা চলে না। তবে দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানুষের অজ্ঞানতা এ দারিদ্র্যের সুযোগে মানহীন ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরি করে থাকে। রাজধানীর বাইরে গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত এলাকায় সেসব বাজারজাত করার অপপ্রয়াস পায়। অবশ্য রাজধানীর যত্রতত্র গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানেও সাশ্রয়ী দামে ভেজাল ও নকল ওষুধ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মনিটরিং ব্যবস্থাও দুর্বল। মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারের সুযোগ-সুবিধাও সীমিত। অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত তো বটেই। এসবের অবসান না হলে মানহীন ওষুধের উৎপাদন বন্ধ করা যাবে না।
×