ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজায়ন- বৃক্ষরোপণ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২২ জুন ২০১৬

সবুজায়ন- বৃক্ষরোপণ

এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সূচনা হলো ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষের। ‘অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান, দেশী ফল বেশি খান’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার উদ্বোধনী আয়োজনে প্রেরণাদায়ক অনেক কথাই উচ্চারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বর্ষাকালে সবাইকে অন্তত একটি করে ফলদ, বনজ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানান। তিনি যথার্থই বলেছেন, মানুষের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই আমাদের পরিবেশকে ভালবাসতে এবং রক্ষা করতে হবে। আমাদের রয়েছে ১৩০টিরও বেশি ঐতিহ্যবাহী ফল। তবে দেশে ৪৫ জাতের ফলের উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় মাত্র ১৮ জাতের ফল। গত বছর যে পরিমাণ ফল দেশে উৎপাদিত হয়েছিল তার মোট বাজারমূল্য ছিল ৫১ হাজার কোটি টাকা। বছরে ১০ লাখ টন আম উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে নবম স্থানে। দেশী ফলের উৎপাদন ভাল হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে বিদেশী ফলের চাহিদাও অনেক। ফলে দেশী ফলের বদলে বিদেশী ফলের দিকে আগ্রহ অনেকাংশে বেড়ে চলেছে। অথচ আমাদের দেশেও সব ধরনের ফল পাওয়া যায়, যার পুষ্টিমানও বিদেশী ফলের চেয়ে অনেক বেশি। গত বছর প্রথমবারের মতো ইউরোপে রফতানি হয়েছে জাতীয় ফল আম। আর দেশের একটি বড় কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার আমের অর্ডার দিয়েছিল। রসালো ফল আম ভারত উপমহাদেশ ও এশিয়ার একটি বিশেষ ফল। আম শরীরের জন্যও খুব কার্যকরী। একসঙ্গে বেশ ভিটামিন, মিনারেল ও শরীরের প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদানের যোগান খুব কম ফলেই আছে। পরিবেশ সংরক্ষণে বনজ গাছ বিরাট ভূমিকা রাখে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিল্প, চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা, পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ- সর্বক্ষেত্রেই গাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই জীবনের প্রয়োজনে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। গাছ ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক, যার ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রাণিকুল আজীবন সর্বাংশে নির্ভরশীল। একটি দেশের পরিবেশ রক্ষায় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে শতকরা ২৫ ভাগ সবুজ এলাকা রাখা অপরিহার্য। দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বনভূমি আমাদের নেই। সরকারী হিসাবে ১৬ ভাগ হলেও বাস্তবে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৭.৭০%। আর ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে মাত্র ৫ শতাংশ। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৩.৫ শতাংশ। তাই সময়ের প্রয়োজনে গাছ লাগানো এখন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বৃক্ষরোপণকারীদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিশেষ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রেই পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণের বিষয়টি উল্লেখ আছে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করেছে। কৃষক লীগ ৩১ বছর যাবত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পরিচালনা করে আসছে। সবুজায়ন কর্মসূচী তখনই প্রকৃত সফলতা পাবে যখন এ কর্মকা-ের পাশাপাশি বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই যুগপৎভাবে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ ও বৃক্ষনিধনে নিরুৎসাহিত করার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
×