ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় নৌট্রানজিট

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৯ জুন ২০১৬

সম্ভাবনাময় নৌট্রানজিট

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আরেকটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলো। প্রতিযোগিতামূলক বর্তমান বিশ্বে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোন একক দেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় সীমান্ত প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দেশ দুটিতে পণ্যের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূখ- ব্যবহার তথা স্থল ট্রানজিটের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার নৌপথে পণ্য পরিবহন তথা নৌট্রানজিট শুরু হয়েছে। দেশ দুটি উভয় দেশের কয়েকটি নদীবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক ট্রান্সশিপমেন্ট। এর ফলে আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য প্রসারিত করার কাজ শুরু হলো। একান্ন বছর পর দু’দেশের মধ্যে চালু হলো আনুষ্ঠানিকভাবে নৌপথে পণ্য পরিবহন। এটা তো বাস্তব, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পণ্য পরিবহন খুবই জরুরী, বাণিজ্য না বাড়লে উন্নয়ন হবে না। ট্রান্সশিপমেন্টের মধ্য দিয়ে দু’দেশই লাভবান হবে। নৌ-প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী প্রথম দিনে কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী একটি জাহাজ বাংলাদেশের আশুগঞ্জের নৌবন্দরে পৌঁছায়। এখান থেকে আখাউড়া হয়ে সড়কপথে পণ্য যাবে ত্রিপুরায়। এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক নৌট্রানজিট। এর আগে পঞ্চাশের দশকের শেষভাগ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন করা হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের পহেলা নবেম্বর দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির অনুসরণে পাঁচ বছর মেয়াদী দু’দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকলটি সই হয়। পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে দুই বছর অন্তর প্রটোকলটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ-ভারত-বাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নৌ-প্রটোকল চুক্তি সই হয়। এর মেয়াদ ২০২০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্য চুক্তির আলোকে প্রটোকলের মেয়াদ নিয়ম অনুসারে বাড়ানোর বিধান রাখা হয়েছে। প্রটোকলের আওতায় চারটি নৌপথ ব্যবহৃত হবে। নৌপথগুলো হলো কলকাতা-শিলঘাট, কলকাতা-করিমগঞ্জ, কলকাতা-ধুলিয়ান, কলকাতা-আশুগঞ্জ। কলকাতা হয়ে আশুগঞ্জ নৌপথের জন্য বাংলাদেশের শ্যালো নদী ব্যবহার করা হতো। কিন্তু জীববৈচিত্র্য তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে শ্যালো নদীতে যান চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল ব্যবহার করায় দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার কমে গেছে। মাসুল হিসেবে প্রতি মেট্রিক টন পণ্যের জন্য শুল্ক ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা। অন্যান্য চার্জ মিলিয়ে মোট দাঁড়ায় ১৯২ টাকা ২২ পয়সা। ট্রান্সশিপমেন্টকে কেন্দ্র করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি আশুগঞ্জ নৌবন্দরে বিপুল সংখ্যক লোকেরও কর্মসংস্থান হবে। পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জাহাজ ও ট্রাক ব্যবহৃত হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। ট্রানজিট চালুর পর থেকে আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাণিজ্য প্রসার বাড়বে। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও মজবুত হবে। প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের জনগণ পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা নিয়েই পাশাপাশি অবস্থান করছে। তাই দু’দেশের জনগণের কল্যাণে দুই দেশকেই সহযোগিতা করা দরকার। তাই আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে বাণিজ্য বাড়বে। বাণিজ্য বাড়াতে হলে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এই ট্রানজিটের ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমে যাবে এবং রাজ্যগুলো উপকৃত হবে। অবশ্য ট্রানজিটের কারণে বাংলাদেশের নৌপথ, সড়ক ও রেলপথের ওপর চাপ বাড়বে। ট্রানজিট সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা থাকবে তিস্তার পানি বণ্টন অভিন্ন অন্যান্য নদীর পানির যথাযথ ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। ত্রিপুরা থেকে গ্যাস আমদানি প্রভৃতি ইস্যুর নিষ্পত্তি। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানকেও অনুরূপ ট্রানজিট প্রদানের বিষয়টি সামনে এসেছে এখন। বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্যকে জোরদার করতে সচেষ্ট থাকবে এটাই প্রত্যাশা।
×