ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রানওয়েতে ধাতববস্তু ॥ টনক নড়েনি সিভিল এ্যাভিয়েশনের

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৫ জুন ২০১৬

রানওয়েতে ধাতববস্তু ॥ টনক নড়েনি সিভিল এ্যাভিয়েশনের

আজাদ সুলায়মান ॥ দুই হাজার সালের ২৫ জুলাই। ১০০ জার্মান পর্যটক নিয়ে নিউইয়র্কের উদ্দেশে এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৫৯০ কনকর্ড চার্জ দ্য গ্যালে এয়ারপোর্টের রানওয়ের থেকে উড্ডয়ন করে। সঙ্গে সঙ্গেই হঠাৎ চাকা পাংচার হয়ে তেলের ট্যাঙ্কিতে আঘাত হানে। তাতে আগুন ধরে যাওয়ায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম গতির কনকর্ড উড়োজাহাজটির এবং গনেসে অঞ্চলের একটি আবাসিক হোটেলের ওপর ওই ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়। এরপর তদন্তে ধরা পড়ে- ওই কনকর্ড উড্ডয়নের পাঁচ মিনিট আগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ওই রানওয়ে থেকেই কন্টিনেন্টাল এয়ারলাইন্সের আরেকটি ডিসি-১০ ওই রানওয়ে থেকে টেক অব করার সময় ইঞ্জিনের কিছু ধাতববস্তু ছিটকে পড়েছিল। ওই ধাতববস্তুর আঘাতেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয় কনকর্ড। তারপরের ইতিহাস আরও বিস্ময়কর। ওই একটি দুর্ঘটনার বিপর্যয় মোকাবিলা করতে না পেরে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় কনকর্ড। শাহজালাল এয়ারপোর্টের রানওয়েতে গত মঙ্গলবার রাতে ওই ধরনের ধাতববস্তু থাকার কারণে আকাশে আধ ঘণ্টা চক্কর দিতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট বিজি-০৩৬ কে। এ ঘটনায় তোলপাড় হলেও টনক নড়েনি সিভিল এ্যাভিয়েশন ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এ ঘটনায় কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চিঠি পাঠানো হলেও সেটা ততটা গুরুত্ব দেয়নি সিভিল এ্যাভিয়েশন। উপরন্তু সিভিল এ্যাভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিতর্কিত রেডলাইনের আমন্ত্রণের লন্ডনে গেছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্তারাও। জানা যায়, গত রবিবার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন- সিভিল এ্যাভিয়েশনের মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, এভসেক সেলের গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব) আলমগীর, নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলমগীর, উপ-পরিচালক অহিদুর রহমান, সচিব এসএম গোলাম ফারুক ও বিমানমন্ত্রীর পিএস এটিএম নাসির মিয়া। সিভিল এ্যাভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, তারা লন্ডন গেছেন যুক্তরাজ্য সরকারের ডিএফটির আমন্ত্রণে। কিন্তু সিভিল এ্যাভিয়েশনেরই এভসেক সেল থেকে এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করা হয়েছেÑ তারা লন্ডন গেছেন রেডলাইনের আমন্ত্রণে। রেডলাইনের উদ্যোগে এ ট্যুরের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করছে। রেডলাইন হিথরো বিমানবন্দর পরিদর্শন করানোর কথা বলেই তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ সম্পর্কে একজন কর্মকর্তা বলেন, বিমানের কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশায় তাড়াহুড়ো করে বিনা টেন্ডারে ৭৭ কোটি টাকার নিরাপত্তার কাজ দেয়া হয় রেডলাইনকে। কিন্তু ফায়দা হলো কি? তিন মাস হয়ে গেল এখনও কার্গোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোন লক্ষণ নেই। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী জনকণ্ঠকে বলেন, কার্গোর ওপর নিষেধাজ্ঞা কবে নাগাদ প্রত্যাহার হবে সেটা বলা মুশকিল। এটা নির্ভর করছে যুক্তরাজ্যের দয়ার ওপর। আমরা গরিব দেশ। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে কার্গোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইস্যু। এদিকে রেডলাইনের আমন্ত্রণে এ সফর নিয়ে বিতর্ক তুলেছে খোদ সিভিল এ্যাভিয়েশনেরই একাধিক পরিচালক। তারা বলছেন, হিথরো বিমানবন্দর পরিদর্শন করে এসেছেন কিছুদিন আগে অপর এক কর্মকর্তা। এখন সেখানে মন্ত্রীর পিএসসহ অন্যদের কি দরকার হিথরো পরিদর্শনের। তারা কেউই বিমানবন্দরের এসাইমেন্ট সংশ্লিষ্ট নয়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনায় যেখানে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে গোয়েন্দারা ঘর্মাক্ত অবস্থায়, সেখানে সিভিল এ্যাভিয়েশনের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মেম্বার অপারেশনের প্রধান কি করে এই মুুহূর্তে কর্মস্থল ত্যাগ করেন? এ নিয়ে বিতর্ক আরও চরম আকার ধারণ করেছেÑ হাসপাতালের শয্যা থেকে ওঠে গিয়ে তিনি ফ্লাইটে ওঠায়। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট আকাশে চক্কর দেয়ার ঘটনা শুনেই মেম্বার (অপারেশন) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান হাসপাতালে ভর্তি হন। আবার লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন।
×