ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জেলে বসেই টার্গেট কিলিং পরিকল্পনা!

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ জুন ২০১৬

চট্টগ্রামে জেলে বসেই টার্গেট কিলিং পরিকল্পনা!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী জেএমবির এক সদস্যের লিখিত চিরকুটের অনুসন্ধান করতেই ওই আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার মহানগর হাকিম হারুনুর রশীদের আদালতে বাকলিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী জেএমবি সদস্য ফুয়াদ মোহাম্মদ বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ আদেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে, এসপিপতœী মিতু হত্যার তদন্তে মুখ খুলছে না পুলিশ। তবে মামলার কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে, সিএমপির এডিশনাল কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এদিকে গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (বন্দর পশ্চিম) মোক্তার হোসেনকে মনিটরিংয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের শেষার্ধে বাকলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার ক্লু উদঘাটনে জেএমবি সদস্য ফুয়াদ মোহাম্মদ বুলবুলের কাছে বেশকিছু তথ্য থাকতে পারে। ওই মামলার সূত্র ধরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এদিকে, গত মাসে ফুয়াদেও লেখা একটি চিরকুট চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। ওই চিরকুটে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক এডিসি ও এসপি বাবুল আক্তারের নামসহ কয়েক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের চিরকুটে নাম উল্লেখ করার পেছনে রয়েছে গ্রেফতারের পর অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে গোয়েন্দা বিভাগে জিজ্ঞাসাবাদ। গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর এলাকা থেকে ৫ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। সে সঙ্গে ছিল জেহাদী বই ও জঙ্গী হামলার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং নীলনক্সা। গ্রেফতারকৃত ৫ জনের মধ্যে ২ জনই ছিল জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুই বাহিনীর প্রধান। এর মধ্যে জিয়াদ ওরফে মোঃ জাবেদ ছিল বিস্ফোরক বিভাগের প্রধান এবং ফুয়াদ ওরফে মোহাম্মদ বুলবুল ছিল জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। গ্রেফতারকৃত ৫ জনকেই তখন মহানগর গোয়েন্দা বিভাগে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। একপর্যায়ে বিস্ফোরক বিভাগের প্রধান জাবেদকে নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন এডিসি বাবুল আক্তারসহ একটি টিম নগরীর কুয়াইশ এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে অভিযানকারী টিমের হাত থেকে জাবেদকে ছিনিয়ে নিতে তার অনুসারীরা হামলা চালায়। ওই হামলায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে জাবেদের মৃত্যু হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতের মাধ্যমে বুলবুলসহ বাকি চার জঙ্গী সদস্যকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগাওে প্রেরণ করা হয়। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে ফুয়াদ ওরফে বুলবুল অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে চিরকুট লিখে পাঠায় তার সংগঠনের সক্রিয় সদস্যদের কাছে। ওই চিরকুটে বাবুল আক্তারসহ অভিযানে থাকা অন্যদের হত্যার আহ্বান জানানো হয়। কি কারণে হত্যা করা হবে এ প্রসঙ্গগুলোও চিরকুটে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অমানুষিক নির্যাতন, জাবেদকে গলায় গ্রেনেড লাগিয়ে পরিকল্পিত হত্যা, ইসলামের পথে যারা কাজ করছে তাদের জেএমবি বলে ঘোষণা ও অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের নির্যাতন করে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চিরকুটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তার পরিবারের ওপর হানা দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ ছিল। এদিকে, গত ৫ জুন ও.আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকার কাছেই খুন করা হয় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও গুলি করে খুন করার মতো ঘটনায় জেএমবির পরিচয় না মিললেও এ ঘটনার সঙ্গে জেএমবিসহ উগ্র জঙ্গীগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। সে অনুযায়ী সিএমপিতে ৫টি কমিটি গঠন করে ঘটনার ক্লু উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতার অভিযান এমনকি তথ্য উপাত্তের সঠিকতা যাচাই করার বিষয়টিও পাঁচটি কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মিতু হত্যাকা-ের আন্তঃবিভাগীয় তদন্ত করছে সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিইউ)। মিতু হত্যাকা-ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য জনকণ্ঠকে জানান, বিশেষ কোন অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারে নো কোশ্চেন নো আনসার। অগ্রগতি থাকলে আমরা মিডিয়াকে জানাব।
×