ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত দর্জিপাড়া, দম ফেলার ফুরসত নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ জুন ২০১৬

ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত দর্জিপাড়া, দম ফেলার ফুরসত নেই

রহিম শেখ ॥ ঈদের পোশাক তৈরিতে ক্রেতারা ছুটছেন দর্জির দোকানে। তাই দর্জিপাড়া এখন মহাব্যস্ত। বিরতিহীন সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ বলছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। আর এই ব্যস্ততা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। রাজধানীর পাড়া মহল্লায় ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণী ও নারীদের পোশাক এখন বেশি তৈরি হচ্ছে। ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট তৈরির যোগান দিচ্ছে রাজধানীর নামকরা সব টেইলার্সগুলো। যদিও রোজার আগে থেকে এই পোশাক তৈরির অর্ডার নেয়া শুরু হয়েছে। ১৫ রমজানের পর অর্ডার নেয়া বন্ধ কওে দেবেন অনেক দোকানি। এবার কাপড়ের দাম বৃদ্ধি তো বটেই, ঈদ উপলক্ষে দর্জিরাও বাড়তি মজুরি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘দর্জিপাড়া’ খ্যাত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর রমনা ভবন, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও মিরপুরের বিভিন্ন টেইলার্সে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় তৈরি কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কাপড় সেলাইয়ের মেশিনের শব্দ একটানা একঘেয়ে, নাকি ছন্দময় তা চিন্তারও সুযোগ নেই তাদের। বাংলাদেশ ড্রেস মেকার এ্যাসোসিয়েশনের সূত্র মতে, রাজধানীসহ সারাদেশে তালিকাভুক্ত লক্ষাধিক টেইলার্স রয়েছে। তবে কোয়ালিটি টেইলার্সের সংখ্যা হবে হাজারের মতো। বাকি ৭৫ হাজার অতি সাধারণ মানের এবং ছোট পরিসরের। সংগঠনের সভাপতি বিএম হারুন জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের সময় হাল ফ্যাশনের তৈরি পোশাকের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। এক্ষেত্রে শরীরের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে হলে দর্জিপাড়ায় তাদের আসতেই হবে এবং আসছেনও। তাই এ সময়ে দর্জির দোকানগুলোতে বেশ ভিড় পড়ে। এবারও তাই হয়েছে। বাংলাদেশ ড্রেস মেকার এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, রাজধানীর ব্র্যান্ড টেইলার্সের মধ্যে রয়েছে সানমুন, সেঞ্চুরি, ক্লাইমেক্স, আইডিয়াল, র‌্যামন্ড, মিডল্যান্ড, স্টার, ফবস, ফেরদৌস, এলিগেন্স, ফাইভ মাস্টার, ম্যানচেস্টার, ক্যামব্রিজ, দি ব্লেজার বিডি, ড্রেস কিং, এম আকবর, হ্যানস টেইলার্স উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নিউমার্কেট, গাউসিয়া ও এলিফ্যান্ট রোডেও বেশ কিছু ব্র্যান্ড টেইলার্স রয়েছে। এসব ব্র্যান্ডগুলোতে কর্মরত কয়েকজনের কর্মচারী জনকণ্ঠকে জানান, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এখন তাদের ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়েছে। রোজার শুরু থেকেই অর্ডার বেড়েছে। তারা এখন দিনরাত কাজ করছেন। বিশেষ করে শার্ট, প্যান্ট ও মেয়েদের পোশাকেরই অর্ডার আসছে বেশি। টেইলার্স মালিকদের কয়েকজন জানান, কয়েক বছর ধরেই এ শিল্পের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য রয়েছে। ফলে মজুরির অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে গ্রাহককে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এসব কারণে নামী টেইলার্সে মজুরি একটু বেশি। একটি শার্ট তৈরিতে নামী টেইলার্সে মজুরি নেয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। প্যান্টের মজুরি নামী টেইলার্সে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এ বিষয়ে নিউমার্কেটের সানসিটি টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, অন্য সময় কাজের চাপ না থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সব অর্ডারও এখন নেয়া যাচ্ছে না। চাঁদনী চক মার্কেটের সুচন্দা টেইলার্সের মফিজুল ইসলাম জানান, বেশির ভাগ অর্ডার আসছে মহিলাদের কাছ থেকে। কারণ মহিলা কিংবা তরুণীদের অনেকেই ফিটিংস পোশাক পছন্দ করেন। এ পোশাকের বড় একটা অংশের অর্ডার আসে রোজার ঈদেই। তাই অনেকে থান কাপড় কিংবা সেট নিয়ে চলে আসছেন দর্জিপাড়ায়। এ কারণে লেডিজ টেইলার্সগুলোয় অন্য সময়ের তুলনায় ব্যস্ততা বেড়েছে। চাঁদনীচক, নিউমার্কেট ও গাউছিয়া ঘুরে জানা যায়, এখানে থ্রিপিস তৈরির মজুরি সর্বনিম্ন ৫৫০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। লং ফ্রক স্টাইলের পোশাক তৈরিতে খরচ পড়বে ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে ডিজাইনের ওপর মজুরির হেরফের হয়। নিউমার্কেটের নিউ ফ্যাশন টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী হোসেন মনসুর বলেন, ঈদের অর্ডার নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কিছু নিয়মিত কাস্টমার আছে তারা যখন কাপড় আনবে তখনই তাদেরটা সেলাই করে দিতে হবে। কারণ তারা আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। আমাদের মজুরি খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। নরমাল সালোয়ার-কামিজের মজুরি ৪০০ টাকা। সিটি কলেজ সংলগ্ন সিটি টেইলার্সের কাটিং মাস্টার প্রসেনজিৎ জানান, গতবারের চেয়ে এবার ঈদে কাজের চাপ বেশি। তাদের প্রতিষ্ঠানে ১২ জন কারিগর প্রতিদিন ৫০ সেট কাপড় সেলাই করে থাকেন। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন তারা। নিউমার্কেটের দর্জি মাস্টার আমিনুল ইসলাম বলেন, সব কিছুর যেমন দাম বেড়েছে; তেমনি কারিগরদের মজুরি বেড়েছে। আগে এক সেট সালোয়ার-কামিজ সেলাই করতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাগত। এখন সেখানে লাগছে সর্বনিম্ন ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। দর্জি দোকানের পাশাপাশি গজ কাপড়ও ভাল বিক্রি হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে বেশ কিছু নতুন গজ কাপড় এনেছেন চাঁদনীচক মার্কেটের দোকানিরা। নিউমার্কেটে পিওর, অর্গেন্ডি, নেট, ভেলভেট, জর্জেট, তসর, সিল্ক, কাতান, টিস্যুসহ রিবণ চিকেন, ভেলভেট চিকেন, লেইস চিকেন, ফুচকা চিকেনসহ বিভিন্ন সুতি কাপড় এসেছে। তবে এসব কাপড়ের দামটা একটু বেশি বলে জানান ক্রেতারা। এ মার্কেটের দোকানি ছদরুল ইসলাম বলেন, চাকচিক্য না থাকলে ঈদের কাপড় চলবে না। তবে অনেকে আবার একেবারে সাদামাটা কাপড়ও খোঁজেন। মিরপুর থেকে জামার কাপড় কিনতে এসেছেন সিমি। তিনি কাপড়ের দাম বেশি বলে অভিযোগ করেন। সিমি বলেন, রোজার আগে যে কাপড় ৩০০ টাকা গজে পাওয়া যেত সে কাপড়ের গজ এখন ৬০০ টাকা লাগিয়েছে দোকানিরা। থানকাপড়ের রকমারি কালেকশন আছে; তবে এসব কাপড়ের দাম খুবই চড়া। এদিকে গজ বা থানকাপড়ের কেনাকাটার সঙ্গে বেড়েছে লেইস, পুঁতি, চুমকি, কুন্দন, পাথর, ডলার, ফিতা ইত্যাদির বিক্রয়। লেইসের দাম ২০ টাকা গজ থেকে শুরু করে হাজার/বারোশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর এক তোলা চুমকি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। আর পুঁতি পাথর বিক্রি হচ্ছে পিস হিসেবে।
×