ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কৌশলী পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১২ জুন ২০১৬

মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কৌশলী পদক্ষেপ

তৌহিদুর রহমান ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুর মধ্যে আটকে না থেকে বহুমুখী সম্পর্ক বিস্তৃত করতে চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারকে চাপে না রেখে দেশটির সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সড়ক ও বিমান যোগাযোগ, ভিসা সহজীকরণ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ভ্রমণ সুবিধা ইত্যাদি ইস্যুকেই এখন প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশটির সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে দু’টি সমঝোতা চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশ থেকে আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার। তবে বার বার তাগিদ দেয়ার পরও মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়নি। এছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের আহ্বান জানালেও মিয়ানমার সাড়া দেয়নি। সে কারণে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে এখন কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার সরকারের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই আভাস দেয়া হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে সামনে এগুতে চায় ঢাকা। মিয়ানমারও বাংলাদেশের আভাসে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদী। রাতারাতি এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় বলেও মনে করছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সমস্যার মধ্যে আটকে না থেকে দুই দেশই এখন সামনে এগিয়ে যেতে আগ্রহী। এতদিন ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটিই বারবার সামনে এনেছে বাংলাদেশ। তবে প্রতিনিয়তই মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে পিছু হটছে। আর রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুর মধ্যে আটকে না থেকে অন্যান্য বিষয়ে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ঢাকা। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে প্রায় পাঁচ দশকের নীরবতা এখন ভাঙতে চলেছে দেশটি। তারা এখন সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বিশ্বের দরবারে উন্মুক্ত হচ্ছে। এখন দেশটি বিদেশী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্যও তার দুয়ার খুলছে। সে কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনার পাশাপাশি রেল ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতপাথর্ক্য থাকা সত্ত্বেও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র মিয়ানমার এখন বাংলাদেশের জন্য পর্যটন, ব্যবসা ও বিনিয়োগের একটি চমৎকার স্থান হিসেবেও পরিণত হতে পারে। সূত্র জানায়, গত নবেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারে এনএলডি ক্ষমতায় আসলেও খুব শীঘ্রই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না সুচির সরকার। কেননা দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করছে সামরিক বাহিনী। আর রোহিঙ্গা ইস্যুটি তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই দেখভাল করছে। সে কারণে সুচি সরকার ক্ষমতায় এলেও খুব দ্রুত রোহিঙ্গা ইস্যুটি সমাধান হবে না বলে মনে করছে ঢাকা। তাই অন্যান্য বিষয়ে জোর দিতে চাইছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে এখন বাংলাদেশের মনোযোগ। মিয়ানমারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ তৈরির লক্ষ্যে একটি সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×