ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর হাঁটাপথ রাজপথ

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১২ জুন ২০১৬

রাজধানীর হাঁটাপথ রাজপথ

ঢাকার সড়ক ও ফুটপাথের বিড়ম্বনা এবং অব্যবস্থা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি হয়। কখনও কখনও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। অব্যবস্থা নিরসনে কিছু উদ্যোগ গৃহীত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তপোক্ত থাকে। কিছুদিন পর আবার সেই পুরনো দশা। সবচেয়ে করুণ ও উদ্ভট এক দশায় পায় ঢাকাকে বোধকরি রমজান মাসে। দিন ও রাতের বিশেষ বিশেষ সময়ে যানজট বিগত এগারো মাসের রেকর্ড ভেঙ্গেচুরে ফেলে। রোজার কারণে অফিসের সময়সূচীতে পরিবর্তন আনা হয়। সরকারী, বেসরকারী চাকরিজীবী, অন্যান্য পেশাজীবী, ছাত্র-বেকার সবার মধ্যে একটা তাড়না থাকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ইফতারি করার। ফলে সন্ধ্যার আগের তিনটে ঘণ্টা ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কের ওপর চাপ বেড়ে যায়। চলমান যানবাহনের ভেতর যত যাত্রী অবস্থান করে সে সময়টাতে, তার চেয়ে বরং বেশি মানুষ থাকে যানবাহনে ওঠার প্রতীক্ষায় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে। রাস্তায় হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। রাস্তা ভর্তি যানবাহন, রাস্তার দুই পাশে, ফুটপাথে এমনকি রাস্তার ভেতরে খালি জায়গায় মানুষ গিজগিজ করতে থাকে। বেশ কিছু পাবলিক বাস এই সময় নগরীর অতিভিড়াক্রান্ত কয়েকটি এলাকার বাস স্টপেজে রাখা হলে কিছু চাপ যে কমে, তাতে সন্দেহ নেই। তাছাড়া অফিস ছুটির সময়েও আগে-পিছে করা হলে একটা লক্ষণীয় সুফল মিলতে পারে। আরেকটা বিষয় অস্বীকারের উপায় নেই যে রমজানে বাড়তি রোজগারের জন্য হোক, কিংবা কেনাকাটা ও বেড়ানোর জন্য হোক ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে যায়। এমনিতেই ঢাকা পরিণত হয়েছে জটিল জনারণ্যে। তার ওপর এই বড়তি চাপ কিছুতেই নিতে পারে না নগরটি। ফলে যা হবার তাই হয়। রাজপথ বেহাল দশায় পতিত হয়। রমজানের কথা না হয় ব্যতিক্রম। এ সময়ে বাড়তি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। কিন্তু সারাবছরই রাজধানীর রাজপথের যে রূপ তা অত্যন্ত অসুস্থ ও বিড়ম্বনাময়। বিশেষত যানজট ঢাকার নাগরিক জীবনের বড় দুতিনটি সমস্যার অন্যতম। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের দৈনিক দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় দিনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। যানজট নিরসনে সরকার স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন কর্তৃপক্ষ করতে চলেছেÑ এমন খবর তাই স্বস্তিদায়ক। এতে সড়কের শৃঙ্খলা কিছুটা ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি। যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট আইনী কাঠামো হালনাগাদকরণ করা হচ্ছে। এটাও ভাল খবর। তবে আইনের প্রয়োগই আসল কথা। আইনের লোক আইন অমান্যকারীদের সাজা না দিয়ে উৎকোচ গ্রহণ করলে তার বেলায় কী ব্যবস্থা নেয়া হবে? সেটাও মনিটরিং করা জরুরী। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার গুলিস্তানের ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে গিয়ে ঘটেছে তুলকালাম কাণ্ড। ফুটপাথের হকারদের সঙ্গে বিপণি বিতানের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকায় সাময়িক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শুক্রবার দুপুরেও হকারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। এদিন গ্রেফতার হন বহুজন। ঢাকার ফুটপাথকে দখলমুক্ত করতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কোন বিকল্প নেই। প্রথম প্রথম কিছু সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। নিয়মিতভাবে ফুটপাথ দখলমুক্ত অভিযান পরিচালনা করা হলে এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোরতা দেখাতে পারলে রাজধানীর ফুটপাথ আবারও পথচারী চলাচল উপযোগী হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
×