ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা আবার পুলিশের হাতে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১০ জুন ২০১৬

প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা আবার পুলিশের  হাতে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলার এখতিয়ার দুদকের হাত থেকে পুলিশের কাছে ফিরিয়ে দিতে সংশোধন করা হলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইন। বৃহস্পতিবার সংসদ কাজে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে এ সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১৬ প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করলেও নতুন চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিরোধী জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। এর আগে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলার এখতিয়ার পুলিশের হাতে থাকলেও সেটা দুদকের হাতে দেয়া হয়। কিন্তু দুদকের জনবলসহ অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে এটি আবারও পুলিশের হাতে দেয়া হচ্ছে। এর আগে বিলের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কয়েকজন সদস্য বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব দিলে তার দুটি গ্রহণ করা হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, সরকারী সম্পত্তি সম্পর্কিত এবং সরকারী ও ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত প্রতারণা বা জালিয়াতি মামলা ছাড়া অন্যান্য প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলার দায়িত্ব পুলিশ পাবে। তবে সরকারী সম্পত্তি এবং সরকারী ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলার ভার দুদকের হাতেই রাখার বিধান রাখা হয়েছে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সরকারী সম্পদ আত্মসাত ও অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের মতো বিষয়গুলো দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের তালিকায় ছিল। ২০০৯ সালে মুদ্রা পাচারের অভিযোগও দুদকের তফসিলে যুক্ত হয়। আর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এক সংশোধনীতে দ-বিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯ ও ৪৭১ ধারার অপরাধ তদন্তের দায়িত্বও দুদকের ওপর বর্তায়। এই ধারাগুলোর মধ্যে প্রতারণার অভিযোগ ৪২০ ধারার অন্তর্ভুক্ত। অন্যগুলো ব্যক্তিগত অর্থ আত্মসাত ও জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলার ধারা। সংসদে উত্থাপিত বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০১৪ এর তফসিলভুক্ত ‘দ্য পেনাল কোড-১৮৬০’ এর কতিপয় ধারা পূর্বের ন্যায় পুলিশ কর্তৃক তদন্তযোগ্য এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হওয়ার বিধান পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে। সেইক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ এর সুফল লাভ করবে। মন্ত্রী আরও বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর অধীন কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতাভুক্ত হবে। যার ফলে এই জাতীয় মামলাগুলোর তদন্ত অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করা যাবে। দুদকের নতুন চেয়ারম্যানের প্রশংসা ॥ বিধি অনুযায়ী সংশোধনী ও জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাবকারীদের আলোচনার সুযোগ দেন ডেপুটি স্পীকার। সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রায় সব সংসদ সদস্যের মুখেই দুদকের নতুন চেয়ারম্যানের প্রশংসা শোনা গেছে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দুদকে হাজার হাজার মামলা পেনডিং রয়ে গেছে, সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। এটি দুদক চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন। উনি অনেক ভাল কাজ করছেন। তবে আমি মনে করি দুর্নীতি দমন কমিশন না বলে তো দুর্নীতি কমিশন বললেই ভাল হয়। কারণ অনেক দুর্নীতি তারাই করছে। জাপার অপর সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, দুদক এমন একটি নাম এখন তার নাম শুনলে সবাই ভয় পায়। যখন যে চেয়ারম্যানই আসেন তখনই উনি এসে একটা ঘোষণা দেন যে, এবার আমি দুর্নীতি দমন করব। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেখি একটা এ্যামেন্ডমেন্ট (সংশোধনী) আছে। সেলিম উদ্দিন বলেন, দুদক কখনো দুর্নীতি দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বর্তমানে দুর্নীতির পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান দুদক চেয়াম্যানের কর্মকা-ে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাত দেয়া শুরু করেছেন। দৃঢ় কমিটমেন্ট না থাকলে দুর্নীতি দূর হবে না। দুর্নীতি বেশিরভাগ সংস্থা ও বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যান্সারের মতো মহামারি আকার ধারণ করেছে। এখন এখানে মন্ত্রী ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করতে পারবেন না। জাপার নূরুল ইসলাম ওমর দুদকের নতুন চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, উনি সত্য কথা বলেছেন। উনি বলেছেন, আমাদের সংস্থার মধ্যেও দুর্নীতি রয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে প্রথমে নিজের টিমে যারা দুর্নীতিবাজ আছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে যে আইন করবো সেটা কার্যকর হবে।
×