ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

দুই রাজাকারের ইশারায় পাক আর্মি ইসমাইলের বাবাকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৯ জুন ২০১৬

দুই রাজাকারের ইশারায় পাক আর্মি ইসমাইলের বাবাকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভী ও ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী জলিলুর রহমান ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী সৈন্যরা শরীয়তপুরের দক্ষিণ মধ্য পাড়ায় পুজারী চন্দ্র মোহন চক্রবর্তীকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ দিন হিন্দু অধ্যুষিত ঐ গ্রামের প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর (সাবেক জেলা জজ) হƒষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। প্রসিকিউশনের সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম জলিলুর রহমান। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম রুদ্রকর, থানা পালং, জেলা শরীয়তপুর। আমি রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছি। একাত্তরের ২৩ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে চর কারাভোগগ্রামে কৃষক আব্দুস ছাত্তারের বাড়িতে গিয়ে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখি। আব্দুস সামাদের ছেলে ইসমাইল আমাদের জানায় যে, আগের দিন পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকারদের দল গ্রামে আক্রমণ চালানোর সময় আসামি রাজাকার সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদার তার বাবাকে দেখিয়ে বলে যে, মুক্তিযোদ্ধারা যাচ্ছে। তখন আর্মিরা তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। আব্দুস সামাদের বাড়ি থেকে সম্ভু কর্মকারের বাড়িতে আসলে তার লাশও দেখতে পাই। এরপর আমি দক্ষিণ মধ্যপাড়ায় দিকে যাই। এই গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। সেখানে গিয়ে খালে জঙ্গলে ও মাঠের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জনের লাশ দেখতে পাই। উল্লেখ্য এই দুই আসামির বিরুদ্ধে ৪টি অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২২ মে, আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে দেড়শ’ সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ প্রায় ২০০ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে ও বাড়ির মালামাল লুট করে। একাত্তরের ২৬ মে, ১৯৭১ সালে জেলার পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলি করে হত্যা করে ও গ্রামগুলো থেকে মামালাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ নারী ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে ৩ দিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে। জুন একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশ ত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে।
×