ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কথায় বাড়তি বোঝা

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৬ জুন ২০১৬

কথায় বাড়তি বোঝা

বাঙালীর বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের ভেতর একটি হলো কথা বেশি বলা। এটাকে নেতিবাচক অর্থে না নিয়ে বরং ইতিবাচকভাবে দেখা যাক। অপরিচিত লোককে কথায় কথায় আপন করে নিতে বাঙালীর দেরি হয় না। নিকটজনের সঙ্গে তো বটেই, অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গেও সে কথার ঝুড়ি খুলে বসে। উভয়পক্ষ যখন বাঙালী তখন কথায় কথায় বেলা বেড়ে যায়। কথার উত্তরে একটু বেশি কথা বলাই বাঙালীর পছন্দ। যিনি তা না করেন তাকে অহঙ্কারী, দেমাগী ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করা হয়। বাঙালীর স্বভাব তার স্বজাতি জানেন বলেই কে আর বদনামের ভাগিদার হতে চান। তাই নিতান্ত কথা খুঁজে না পেলে বাঙালী একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। এতে বক্তব্য জোরালো হয় বলেও অনেকে মনে করেন। কথায় সময় খরচ হয়, এটা ভেবে কষ্ট পাওয়ার মতো কৃপণ খুব বেশি কি আছে আমাদের সমাজে? নির্দিষ্ট সময়ে বাঙালীর মিটিং শেষ হয় না। কারণ তার কথা ফুরোতে চায় না। কথার পিঠে নানা কথা এসে জাল বুনতে শুরু করে। এই জাল বোনাকে কোন রসিক মাকড়সার জটিল জাল বোনার সঙ্গে তুলনা করতেই পারেন। যা হোক, কথা যে শুধু সময়ের খরচ তা তো নয়। যদি টেলিফোনে সে কথোপকথন হয় তাহলে অর্থ ব্যয়ও সেইসঙ্গে যুক্ত হয়। এখনও দুই দশক পেরোয়নি বাঙালী সেলুলার বা মোবাইল ফোনে কথা বলছে। বলতে চাইছি মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ অবারিত হয়েছে দেড় দশকের কিছু বেশি হবে সময়টা। তবু এরই মধ্যে মোবাইলে সেই আগের অভ্যাসবশত টি এ্যান্ড টি ফোনের মতোই বাঙালী খোশগল্পে মাততে পছন্দ করে ফেলেছে। এজন্য যে তাকে বাড়তি টাকাও গুনতে হচ্ছে সেটা জেনেও উপেক্ষা করার মতো উদারতা বাঙালীর রয়েছে। আমাদের বিচক্ষণ অর্থমন্ত্রী বাঙালীর স্বভাব নিশ্চয়ই ভাল জানেন। কথা বলার ওপর যে কর ধার্য করা আছে তার ওপর আরেকটু বোঝা চাপালে খুব সহজেই প্রতিদিন কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগৃহীত হবে- এটা তিনি ভালই জানেন। দেশে এখন মোবাইল ফোন গ্রাহকসংখ্যা ১২ কোটি ৪৭ লাখ। স্থানীয় পর্যায়ে সিগারেটের পর মোবাইল ফোন হচ্ছে রাজস্ব আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। অবশ্য জাতীয় বাজেট দিন দিন স্ফীত হচ্ছে। এত খরচ বাড়ছে যে, তার সঙ্কুলান করা রীতিমতো কঠিন হয়ে উঠছে। তাই সহজ উপায়ে রাজস্ব বাড়ানোর এই সুযোগ অর্থমন্ত্রী মহোদয় গ্রহণ করবেন তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু কথায় বলে না- ‘পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে’। এই অতিরিক্ত খরচটা যে গুনতে হবে সাধারণ মানুষকেই। যাদের আয় সীমিত। যাদের মাসিক খরচে এই বাড়তি ব্যয় যোগ হওয়া বোঝা বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষ করে যারা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের জন্য এটি আরও বড় বোঝা। মোবাইল ফোন সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপকে গ্রাহকদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখছে মোবাইল কোম্পানিগুলো। তারা মনে করছে এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ওপর চাপ বাড়বে। পাশাপাশি মোবাইল সেবা ব্যবহারের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অল্প খরচে দূর-দূরান্তে অবস্থানকারী নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। এখন অতিরিক্ত করের কারণে জীবনের এই সহজতা, গতিময়তা ও স্বাভাবিক সৌজন্য বজায় রাখার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। জনমানুষের ওপর এই বাড়তি চাপ সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা আশা করব, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
×