ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রী আজ সংসদে তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার এই বাজেট পেশ করবেন;###;রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা

আজ বাজেট পেশ ॥ আকার বাড়ছে ২৯ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ জুন ২০১৬

আজ বাজেট পেশ ॥ আকার বাড়ছে ২৯ শতাংশ

কাওসার রহমান ॥ আজ বাজেট। সরকারী মহলে উচ্ছ্বাস থাকলেও ব্যবসায়ী মহলে শঙ্কা। আশঙ্কার রসদ হচ্ছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক। আবার বড় অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও চ্যালেঞ্জ আছে। আছে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে সমৃদ্ধির সোপানে যাওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের দেশ গড়তে আবারও বড় অঙ্কের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার এক কঠিন অঙ্কের বাজেট নিয়ে আসছেন তিনি। বড় অঙ্কের বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী হিসাব মেলাতে পারেননি চলতি অর্থবছর। বড় ধরনের কাটছাঁটের মুখে পড়েছে তার উচ্চাভিলাষ। তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩০ শতাংশ বড় বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি। বছর শেষে সেই উচ্চাভিলাষের অঙ্ক এবার কতটা মেলাতে পারেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। তবে অর্থমন্ত্রী মনে করেন, উচ্চাভিলাষী হলেও জনগণের দ্বারপ্রান্তে অধিক সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আরও বড় বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমি শুরু থেকেই বলে আসছি বড় হতে হলে স্বপ্ন বড় হতে হবে। আর বড় স্বপ্ন পূরণ করতে হলে বাজেটের আকারও বড় হতে হবে। বড় সেবার জন্য বড় বাজেটের বিকল্প নেই। ৯০/৯২ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে আমরা এখন ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নের চিন্তা করছি। আর তার সুফলও আমরা পাচ্ছি।’ আবুল মাল আবদুুল মুহিত বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার কত হবে, সেটাও এখনই নির্ধারণ করে রেখেছি। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেটের আকার হবে ৫ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া নিয়ে আমিও কিছুটা উদ্বিগ্ন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আদায় না হওয়ার কতগুলো যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এ নিয়ে আমার বন্ধুমহল, বেশ কয়েকজন সহকর্মী ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি একাধিকবার বৈঠক করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি নিশ্চিত হয়েছি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও আসন্ন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো যাবে না। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বেশ কিছু সুপারিশ পেয়েছি। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতিসহ অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখেই নতুন অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি মনে করি, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত উন্নয়নের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেসরকারী বিনিয়োগে প্রাণ ফেরানো। বিনিয়োগে অক্সিজেন জোগাতে না পারলে কর্মসংস্থান বাড়বে না। বাড়বে না রফতানি। এজন্য বিদেশী লগ্নিকারীদের দেশে আনতে হবে। বেসরকারী লগ্নি কমে আসায় সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে বিনিয়োগের ঝাঁপি তথা অবকাঠামো নিয়ে। কারণ জিডিপি বাড়লেও তাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। বর্তমানে বেসরকারী বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। আবার প্রতিবছর উন্নয়ন বাজেটের মাধ্যমে বিনিয়োগের সম্পদও তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু অবকাঠামো ও জমি সঙ্কটের কারণে এগুলোর ব্যবসার করা যাচ্ছে না। আবার সরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা বন্দরের মতো অনেক মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলো সামাল দিয়ে তীরে ওঠা সহজ কাজ নয়। তার ওপর সরকারী কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়ছে আগামী অর্থবছর থেকে। এজন্য গুনতে হবে বড় অঙ্কের টাকা। রাজস্ব তহবিলের যে অবস্থা, তাতে এতগুলো বড় ব্যাপার সামলানো কিন্তু কঠিন। এই অবস্থায় সরকারের জন্য ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন। এতে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সাধারণ মানুষও ১৫ শতাংশ ভ্যাটের যাতাকলে নিষ্পেষিত হবে। এক লাফে সব পণ্যের দাম ১৫ শতাংশ করে বেড়ে যাবে। এতে বাড়বে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। ইতোমধ্যে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা বেঁকে বসেছে। রাজপথে মানববন্ধন করে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অব্যাহতভাবে বন্ধ রাখার লাগাতর কর্মসূচীর আল্টিমেটাম ঝুলছে সরকারের চোখের সামনে। দেশীয় শিল্পের জন্য মাথাব্যথার আরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে গণহারে সম্পূরক শুল্কের প্রত্যাহার। প্রস্তাবিত বাজেটে ১১৯২টি আমদানি পণ্য থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আইএমএফের ঋণ সহায়তার শর্ত মানতে গিয়ে সরকার সংরক্ষণ সুবিধা তুলে নিয়ে দেশীয় শিল্পকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ১৭০টি জরুরী পণ্য ছাড়া আর কোন পণ্যে সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে একথা বলা হয়েছে। যা আগামী পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। গণহারে এ আইন কার্যকর হলে নব্বইয়ের দশকের মতো আবারও দেশীয় শিল্প মুখথুবড়ে পড়বে। বিদেশী পণ্য দেশে সস্তায় চলে আসবে। ফলে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক দেশীয় শিল্প। বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রীর সাইফুর রহমান ১৯৯১ সালে বাণিজ্য উদারীকরণ করতে গিয়ে দেশীয় শিল্পকে রুগ্ন শিল্পে পরিণত করেছিলেন। দাতাদের প্রেসক্রিপশনে সেই একই পথে হাঁটছে তারই উত্তরসূরি আবুল মাল আবদুল মুহিত। যা আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি বিরুদ্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি হচ্ছে সংরক্ষণ সুবিধা দিয়ে দেশীয় শিল্পের সম্প্রসারণ। বাজেট ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন করে দেবে তা কখনও মনে করে না এদেশের সাধারণ মানুষ। তাদের চাওয়া, আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকুক, নিত্যপণ্যের দাম থাকুক ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। নজর দেয়া হোক রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে। সরকারী অর্থের সুষম বণ্টন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হোক। বাজেটে তৃণমূলের মতামত কখনোই প্রতিফলিত না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনা সব সময় বিবেচনায় রাখে। কিন্তু সরকারের নীতি নির্ধারকরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শেষ পর্যন্ত গণহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়ন করলে সাধারণ মানুষের চাওয়াগুলো উপেক্ষিতই থেকে যাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫.৮ শতাংশ। তবে বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা কতটা অর্জন করা যাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ই থেকে যাচ্ছে। বাজেটের অঙ্ক বাড়লেও বাড়ছে না বাস্তবায়নের দক্ষতা। ফলে প্রতিবছরই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকছে। তাই অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে কাগজে উচ্চাভিলাষী না করে, বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নের। প্রতিবছর বড় বাজেট দেয়া হলেও বছর শেষে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। বিশেষ করে বাজেট প্রাক্কলন ও সম্পদ জোগানের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক থাকে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব ধরা হয়। কোন ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করেই অনুমাননির্ভর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য স্থির করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এতে শুধু সরকারের ভাবমূর্তি-ই নষ্ট হচ্ছে না, আর্থিক সুশাসনের ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করে। তাই নিজস্ব সম্পদ আহরণ নিশ্চিত করতে বাজেটে রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা ও বাজেট ব্যয়ে সক্ষমতা বাড়ানো জরুরী। প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি না করে সংশোধিত বাজেটের ওপর ভিত্তি করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। সেই সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা থাকা উচিত। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এটি সংশোধন করে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। মূলত বাজেটের আকার বাড়লেও, বড় বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়েনি। এরফলে বছর শেষে এসে বাজেটর আকারে বড় ধরনের কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এতে শেষ পর্যন্ত বাজেট আর উচ্চাভিলাষী থাকছে না। বাস্তবিক বাজেটেই পরিণত হচ্ছে। তবে নতুন বাজেটটিও অর্থমন্ত্রীর উচ্চাভিলাষী বাজেটেই পরিণত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটকে ভিত্তি ধরলে আগামী বাজেটের আকার বাড়ছে প্রায় ২৯ শতাংশ। এবারও সেদিকে লক্ষ্য না রেখেই আবারও উচ্চাভিলাষী বড় বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন বাজেটের সবচেয়ে বড় উচ্চাভিলাষ হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায়। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে দুই লাখ তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের বড় বড় লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। তবে এই অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় তা ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে অর্থমন্ত্রী মনে করছেন, যৌক্তিক কারণে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য দমে যাওয়ার কোন কারণ নেই। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি বলে আসন্ন বাজেটে তা কমানোর কোন সম্ভাবনা নেই, বরং এটা আরও বাড়বে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের মূল অস্ত্র হিসাবে ধরা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর তথা ভ্যাটকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা, তার মধ্যে ভ্যাট থেকেই আসবে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য এরপরই রয়েছে আয়করের অবস্থান। আয়কর থেকে আদায় করা হচ্ছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা, আর শুল্ক খাত থেকে আসবে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগাসাজশে যেভাবে কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে, তা রোধ করা গেলে শুল্ক খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ভ্যাটের পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে আয়করের দিকেও নজর দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সম্পদশালীদের কাছ থেকে কর আদায়ে বিশেষ তৎপরতা থাকবে আগামী অর্থবছরে। তবে নিম্ন আয়ের করদাতাদের স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসার প্রতি জোর দেবে রাজস্ব বোর্ড। এছাড়া কর্পোরেট কর ও শুল্ক ব্যবস্থায়ও বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে নতুন বাজেটে। আগামী অর্থবছরেও সরকার সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে চাইছেন। এ লক্ষ্যে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে এবারের বাজেটে চমক দেয়ার মতো তেমন কিছু থাকছে না। অবশ্য প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হবে গতানুগতিক। তবে অবকাঠামোসহ বড় বড় খাত উন্নয়নে ‘ক্যাপিটাল বাজেট’ শীর্ষক একটি ঘোষণা থাকবে বাজেটে। এতে সাময়িকভাবে আটটি বড় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। পরবর্তীতে আরও ২-৩টি প্রকল্প এতে যোগ হতে পারে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বরাদ্দসহ হিসাব করলে এডিপির আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। চলতি বছর এডিপির আকার ধরা হয়েছিল ৯৫ হাজার কোটি টাকা। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এই উন্নয়ন কর্মসূচীর ৫৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকাই যাবে গ্রামে। বিশেষ করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হবে বাজেটের মাধ্যমে। বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকলেও জিডিপি ও বাজেটের আকার বৃদ্ধির কারণে অঙ্কের হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ৪৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। বাকি ৫৪ হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা থেকে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এছাড়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে আস্থা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশে নেয়ার পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে। বর্তমানে বিনিয়োগের হার ২২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। একই সঙ্গে আগামী তিন বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষকে কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া বরাবরের মতো এবারও বাজেটে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়বে। এছাড়া ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমিয়ে আনা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে কমিয়ে তা করা হচ্ছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রণোদনা ১২ হাজার ৫০০ কোটি, নগদ ঋণ ৭ হাজার কোটি ও ভর্তুকি ৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে কৃষিতে ৯ হাজার, রফতানিতে ৩ হাজার এবং পাটজাত দ্রব্যে ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) জন্য আগামী বাজেটে কোন অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। তেমন সুফল না মিললেও পিপিপি খাতে এ বছরও বরাদ্দ বাড়ছে। বাজেটে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারি (পিপিপি) খাতে বেশি অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যাও বাড়ছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এটা আবার তিন হাজার কোটি টাকা হতে পারে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর থেকেই পিপিপি স্রেফ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। তারপরও আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারি (পিপিপি) খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মূলত বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে। এছাড়াও ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকছে বাজেটে। ব্যাংকিং খাত নিয়ে তেমন কিছু বাজেটে না থাকলেও ‘ব্যাংকিং কমিশন’ গঠনের কথা থাকতে পারে। আগামী বছর থেকে সরকারী কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়ছে। বেতন কমিশনের এ সুপারিশ কার্যকর হলে সরকারের খরচ অনেকটা বাড়লেও মানুষের হাতে টাকার জোগানও বাড়বে। ফলে বাড়বে পণ্যের চাহিদা। আশার আলো দেখবে দেশের শিল্প খাত। এছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। মানব সম্পদ উন্নয়নেও রাখা হচ্ছে একশ’ কোটি টাকার বরাদ্দ। দেশে বিনিয়োগের প্রধান সমস্যা গ্যাস। তাই বাজেটে আগামী ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি গ্যাস প্রদানের ঘোষণা দেয়া হবে। প্রশ্ন হলো, সীমিত অর্থের ভা-ার নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিত কতটা দরাজ হতে পারবেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার নয়। সব জল্পনার শেষ হবে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। পাওয়া এবং হারানোর উপাখ্যান ইতোমধ্যে লেখা হয়ে গেছে। প্রকাশ হতে যা সামান্য দেরি। সাইফুর রহমানের রেকর্ড ভাঙ্গার ইচ্ছে ॥ আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি হবে দেশের ৪৬তম বাজেট। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এটি তৃতীয় বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এটি অষ্টম বাজেট। এছাড়া এরশাদ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটও ঘোষণা করেন তিনি। সে হিসাবে, নিজের দশম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এই নিয়ে জাতিকে টানা আটটি বাজেট দেয়ার নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। তবে ১২টি বাজেট দিয়ে সাইফুর রহমান সর্বোচ্চসংখ্যক বাজেট প্রণয়নের রেকর্ড ধরে রেখেছেন। এ রেকর্ডটিও ভাঙার ইচ্ছে আছে তার। তবে সেটা সামগ্রিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
×