ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজির বদলে সিএনজি আমদানির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ মে ২০১৬

এলএনজির বদলে সিএনজি আমদানির উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ অবশেষে সাঙ্গুর অবকাঠামো ব্যবহার করে দেশে কম্পোজড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গ্যাস ক্ষেত্রটি ২০১৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর সাগরবক্ষে অবকাঠামোগুলো পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিত করেছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সাঙ্গুর অবকাঠামো ব্যবহার করে শুরুতে লিউকিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে পানির গভীরতা সাড়ে আট মিটারের বেশি নয়। এই গভীরতায় বড় জাহাজ আনা সম্ভব নয়। সঙ্গত কারণে এলএনজির বদলে এখন সিএনজি আনার বিষয়টি ঠিক করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে আবিষ্কৃত একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র ছিল সাঙ্গু। অগভীর সমুদ্রের ১৬ নম্বর ব্লকে ১৯৯৬ সালে গ্যাস পাওয়ার দুই বছরের মাথায় উত্তোলন শুরু করে বিট্রিশ বহুজাতিক কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি লিমিটেড। কোম্পানিটি ভুয়া ঘোষণা দিয়ে গ্যাসের মজুদ বাড়িয়ে দেখিয়ে অতিরিক্ত হারে গ্যাস তুলতে থাকে। মাত্র নয় বছরের মাথায় খনির উৎপাদনে ধস নামে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে নতুন করে কূপ খনন করে কম্প্রেসার বসিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। ওই সময় গ্যাস ক্ষেত্রটি আরেকটি অষ্ট্রেলীয় বহুজাতিক কোম্পানি স্যান্টোসের কাছে বিক্রি করে দিয়ে সটকে পড়ে কেয়ার্ন এনার্জি। গ্যাস না পাওয়ায় ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস ক্ষেত্রটির উৎপাদন বন্ধ করা হয়। পরিত্যক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪৮৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হয়। এর মধ্যে কস্ট রিকভারি এবং প্রফিট গ্যাস হিসেবে ইজারাদার কোম্পানি পায় ৭৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬১ বিলিয়ন ঘনফুট। যা পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট তিন ডলারে কিনে নেয়। বাকি ২৬ শতাংশ অর্থাৎ ১২৭ বিলিয়ন ঘনফুট পায় বাংলাদেশ। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সাঙ্গুর অবকাঠামো ব্যবহার করে গ্যাস আমদানির উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেয়া হয়। পেট্রোবাংলা যাচাই-বাছাই করে সিএনজি আমদানি করার বিষয়ে মত দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর জন্য ইরান সফর করে। ওই সফরের পর এলএনজি আমদানির বদলে সিএনজি আমদানির বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। জ্বালানি বিভাগ বলছে সিএনজির উৎস নির্ধারণ করে শীঘ্রই আমদানির উদ্যোগ নেয়া হবে। সাঙ্গু ক্ষেত্রের গ্যাস তুলে ভূমিতে এনে প্রক্রিয়াজাত করতে চট্টগ্রামে একটি প্রসেস প্ল্যান্ট স্থাপন করে কেয়ার্ন এনার্জি। প্ল্যান্টটি প্রতিদিন ৫২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রক্রিয়া করতে পারে। এছাড়াও গ্যাসক্ষেত্রের সমুদ্রের গভীরে স্ট্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ও পাইপলাইন রয়েছে। এগুলো স্থাপনে কয়েক কোটি ডলার ব্যয় হয়। প্রথা অনুযায়ী গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত হলে সম্পদ পেট্রোবাংলার অধীনে থাকে। অর্থাৎ এই সম্পদ ব্যবহার করলে বহুজাতিক কোম্পানিকে আর কোন অর্থ দিতে হবে না। অনেক আগে থেকে দেশে সিএনজি পরিবহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিথেনকে উচ্চচাপে সংরক্ষণ করলে তাকে সিএনজি বলা হয়। পেট্রোল এবং ডিজেলের বিকল্প জ্বালানি ছাড়াও এলপিজিতে প্রপেন হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করা যায়। প্রসঙ্গত সরকার মহেশখালিতে একটি ভাসমান এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রাক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর বাইরে মহেশখালি এবং পায়রাতে আরও দুটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দুই প্রকল্পর সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনার জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনটি এলএনজি টার্মিনালে দৈনিক দুই হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করতে চায় সরকার। গ্যাস সঙ্কটে দেশে বড় রকমের জ্বালানি সঙ্কটের আশঙ্কা থেকে এসব এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে সম্প্রতি এক চিঠিতে সরকারকে জানানো হয়েছে বর্তমানে দেশে গ্রাহকের সর্বাধিক গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যার বিপরীতে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক গড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। যদিও বেসরকারী হিসেবে এই সঙ্কট ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। ওই চিঠিতে বলা হয়, গ্যাসের চলমান চাহিদা বিবেচনা করে অনুমান করা যায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলেও বিপুল এই পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা আমদানি ছাড়া মেটানো সম্ভব নয়।
×