ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাকে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৫ মে ২০১৬

পোশাকে নতুন সম্ভাবনা

‘তৈরি পোশাক খাতে দক্ষিণ এশিয়ার কর্মসংস্থান, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ বয়ে এনেছে। সোমবার ঢাকায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও বিশ্বব্যাংক এক আলোচনা সভাও করেছে। এতে বলা হয়েছে যে, চীনা পোশাকের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে বাংলাদেশে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তেমন উল্লেখযোগ্য হারে রফতানি না বাড়লেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়বে ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, চৈনিক পোশাকের দাম বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পোশাক রফতানি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাড়লেও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি। কেননা, এ খাতে দেশটির অংশীদারিত্ব ওই তিন দেশের তুলনায় বেশি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ চীনের পরেই বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ। চীন উচ্চমূল্যের পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে বিধায় নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে পোশাক খাত থেকে। সেখানে বর্তমানে মজুরির হারও ক্রমবর্ধমান। নব্বইয়ের দশকে চীনের মোট রফতানিতে তৈরি পোশাকের অবদান ছিল ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১২ সালে তা নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রসহ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাত এখনও অমিত সম্ভাবনাময়। প্রবাসী আয়ের পরই এর সুদৃঢ় অবস্থান। ২০১২ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষাটি বাংলাদেশের সামনে একটি বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জও নিঃসন্দেহে। চীনের শূন্যস্থানটি খুব সহজেই দখল করে নিতে পারে বাংলাদেশ। কেননা, বাংলাদেশের শ্রমবাজার এখনও পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় তুলনামূলকভাবে সস্তা, শ্রমঘন। দেশে প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ-তরুণী প্রবেশ করে থাকে শ্রমবাজারে। কর্মক্ষম তারুণ্যের সংখ্যাও বেশি, শতকরা ৬৬ শতাংশ। ২০৩০ সাল নাগাদ তা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বিশ্বব্যাংক হিসাব করে দেখেছে যে, দেশে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন ১ শতাংশ বাড়লে দশমিক ৩ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। বিপুল কর্মসংস্থানের এই অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে দেশীয় পোশাক খাতকে। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে পোশাকের দর, মান, লিড টাইম, আস্থা, সর্বোপরি কারখানার নিরাপত্তা মানের ওপর। সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, এ্যাকর্ড এ্যালায়েন্সের দেখভাল ও খবরদারির পর দেশের পোশাক কারখানাগুলোর সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটেছে। আপাতত গ্যাসের সমস্যা কিছু থাকলেও বিদ্যুত পরিস্থিতি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। দেশের ১০০টি স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে জোরেশোরে। ইতোমধ্যে রেল সংযোগসহ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে। চালনা বন্দরের সংস্কারসহ পায়রা নৌ-বন্দর চালু করা সম্ভব হলে তৈরি পোশাক খাতে আরও গতি আসবে বলে আশা করা যায়। সেক্ষেত্রে রফতানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর এককভাবে নির্ভর করতে হবে না। ব্যাংকগুলোতেও জমে আছে অলস টাকার পাহাড়। সুদহার কমানোর চিন্তা-ভাবনাও চলছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোন কারণ নেই। বর্তমান সরকার বিনিয়োগ, ব্যবসা ও শ্রমবান্ধব হিসেবেই পরিচিত। তবে মনে রাখা দরকার, চীনের শূন্যস্থান দখল করতে ভিয়েতনাম, কম্পোডিয়া, লাওস মুখিয়ে আছে। তবে সেসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রম ঘনত্ব ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেশি। সুতরাং কালবিলম্ব না করে ঝাঁপিয়ে পড়ার এখনই প্রকৃষ্ট সময়।
×