জ্বালানি তেলের দাম কমল নাকি পুনর্নির্ধারণ হলো সে নিয়ে ভোক্তারা বাহাস করতেই পারেন। এরা স্বার্থটাই তো দেখবেন, কারণ তেলের ব্যবহারকারী এরাই। জনগণের ব্যাপক অংশ এতে কী সুফল পাবে, কীই বা কাজে দেবে তার- সেটা নিরূপণ করা দুরূহ নয়। দাম কমানো বা পুনর্নির্ধারণ- যাই বলা হোক না কেন, এতে জনজীবনে কোন প্রভাব পড়েনি। পড়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের ব্যবহৃত জ্বালানির দাম তুলনায় বেশি হ্রাস করায় তারাই সুফল পাবেন। সাধারণের জন্য এটা নামকাওয়াস্তে হ্রাস যা অতি সামান্যই বলা যায়। যোগাযোগমন্ত্রী তো আগাম বলে রেখেছেন, ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি এক টাকা কমলে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া এক পয়সা কমবে। দাম কমানো হয়েছে নামমাত্র তিন টাকা। তাতে কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা, এক শ’ মাইল পাড়ি দিলে তবেই তিন টাকা কমবে। এই ‘শুভঙ্করের ফাঁক’ উপলব্ধি করা সুকঠিন নয়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের দুই বছর পর দেশে কমানো হলো মূল্য। আর সরকারী ঘোষণার কুড়ি দিন পর তা কমানো হলো। এই সময়টাতে তেল সঙ্কট দেখা দেয় দেশজুড়ে। পাম্প মালিকরা মূল্য হ্রাসের আগাম ঘোষণায় তেল সংগ্রহ করেননি। ডিলাররা চাহিদানুযায়ী তেল সরবরাহ করছে না এখনও। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে ধান মাড়াই করা, যানবাহন চলাচলের কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এই প্রবল খরার সময়েই। ডিজেলে দাম কমিয়েছেন মাত্র তিন টাকা লিটারপ্রতি। এটা অনেকটা সেই ‘যাহা বাহান্ন তাহা তেপ্পান্ন।’ দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিজেল। সাধারণ পরিবহনসহ নানা কাজে এই ডিজেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কৃষিসহ অন্যান্য খাতে এর ব্যাপক ব্যবহার হলেও দাম কমেনি। এতদিন দেশে তেলের দাম না কমানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেল বিক্রি করে যে মুনাফা করছে, তা দিয়ে অতীতের লোকসানের বকেয়া পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে। অথচ প্রতিবছর বিপিসিকে যে সহায়তা সরকার দিয়ে আসছে, তা জনগণের করের অর্থ অবশ্যই। আর প্রতিবছরই এটি পরিশোধ করা হয়। ফলে লোকসান থাকার কথা নয়। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিষ্ঠান কেন অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য জনগণকে ভুক্তভোগী করবে, সে প্রশ্ন সামনে আসবেই।
প্রথম ধাপে যে দাম কমানো হলো, তাতে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে কোন কাজে আসছে না। আর বাকি দু’ধাপ পর্যন্ত সময়ে বিপিসি মুনাফা করবে। অথচ ভোক্তাদের প্রত্যাশার বিপরীতে দাম আগামীতেও কমবে যৎসামান্য। এতে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। গ্রাম বাংলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেরোসিনের ব্যবহার থাকলেও তার দাম কমেছে নামমাত্র। বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম কমানো হয়েছে বেশ পরিমাণে। তেমনি অকটেন ও পেট্রোল ১০ টাকা ও ১২ টাকা কমানো হয়েছে। ভোক্তাদের যদি কাজেই না লাগল তবে এমন লোক দেখানো দাম কমিয়ে মূল প্রাপ্তিটা কোথায়? জনগণকে বঞ্চিত করে, জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে জনসেবা হয় না। সরকারের উচিত হবে একবারে দাম নির্ধারণ করা। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষাই তেলেসমাতি থেকে উদ্ধার করতে পারে।
শীর্ষ সংবাদ: