ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের বাধা দূর করুন

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

উন্নয়নের বাধা দূর করুন

স্বাধীনতার পরে শত বাধা-বিপত্তি এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে ক্রমশই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এর সর্বশেষ উদাহরণ জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ঘরে পৌঁছানো। বিশ্বব্যাংক এবং সিপিডি অবশ্য এই হার কিছু কম বলছে। তবে তারাও উন্নয়নের ধারা ও অগ্রগতিকে অস্বীকার করছে না। ১৯৯০ সালে বছরে গড়ে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এবারই প্রথম তা ৭ শতাংশ অতিক্রম করল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২১ সালে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। শনিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত দুদিনের সম্মেলনে উঠে এসেছে এসব তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য। তবে উন্নয়নের ভবিষ্যত অগ্রযাত্রায় উন্নয়নের প্রতিবন্ধক পাঁচটি হুমকিও চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ এবং শিক্ষিত বেকার। স্বাধীনতার পরপরই একটি পরাশক্তি কর্তৃক যে দেশটিকে অভিহিত করা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে, অচিরেই সে দেশটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে, এটি একটি বিস্ময় বটে। এক্ষেত্রে কৃষি খাতের অবদান অবশ্যই স্মরণযোগ্য। এর পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। কিন্তু নিত্যনতুন শহর-বন্দর-নগর গড়তে গিয়ে এবং মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে কৃষি জমি। মাঠ-ঘাট-নদী-নালা-পুকুর-জলাশয় ইত্যাদি দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টিতে সরকারকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের মধ্যে একটা সুষম ভারসাম্য আনতে হবে। স্বল্প জমিতে পরিকল্পিত উপায়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে অধিক লোকের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে কৃষি জমির ব্যবহারও হতে হবে পরিকল্পিত। ধান-গমের পাশাপাশি পাট ও ডালসহ অন্যবিধ ফসল বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই খাল-বিল-জলাশয়-নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক উৎসসমূহকে বাধাদান অথবা দখল-ভরাট করা চলবে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত-নেপাল-ভুটানের মতো অভিন্ন নদ-নদীর পানিপ্রবাহ তথা ফারাক্কা-তিস্তা ইত্যাদি পানি বণ্টনের বিষয়ে সুষ্ঠু ও সমন্বিত মীমাংসা করতে হবে। মনে রাখতে হবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে। দুর্নীতি যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক, এ বিষয়ে সন্দেহ করা চলে না। ইতোপূর্বে কয়েক বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতিতে বিশ্বে শীর্ষস্থান দখলের পর ধীরে হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দুর্নীতি হ্রাস সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু বিনির্মাণে বিশ্বব্যাংক তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করলেও থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ দেশের অর্থনীতির সক্ষমতারই পরিচায়ক। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণও নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এবং ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের উন্নয়নে কত বিদ্যুত লাগবে সেই হিসাব করে অগ্রসর হচ্ছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাসহ দ্রুত শিল্পায়ন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে। এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়বে; ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমবে। মনে রাখতে হবে যে, দেশে এখনও দুই কোটি অতি দরিদ্র লোক আছে। গত কয়েক বছরে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হলেও এক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ভবিষ্যত অগ্রযাত্রায় অর্থনীতির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আশঙ্কাও আছে বৈকি। বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী কর্মকা- সর্বোপরি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গী কার্যক্রম যে কোন সময় দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিবার্য ব্যাহত হবে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সে অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কঠোর নজরদারি অত্যাবশ্যক। আধুনিক রাষ্ট্রে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। বর্তমান সরকারকে এ বিষয়ে সবিশেষ মনোযোগী হতে হবে।
×