ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণহীন সড়ক দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

নিয়ন্ত্রণহীন সড়ক দুর্ঘটনা

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার এতটাই বেড়েছে যে, এখন নিরাপদ সড়কের দাবিটিই যেন নিছক কথায় পরিণত হয়েছে। এমন কোন দিন নেই, যেদিন অকালে প্রাণ ঝরছে না, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারি হয়ে উঠছে না। সড়ক যেন দিন দিন মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট পরিবারের জন্য সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ রংপুরের তারাগঞ্জে দুটি বাসের সংঘর্ষে বাসচালকসহ ১৩ জন নিহত এবং ৪৫ জন আহত হয়েছেন। রংপুরে এটা স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সময় চালকের অসাবধানতা, অদক্ষতা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, রাস্তার দুরবস্থাসহ নানাবিধ কারণই সড়ক দুর্ঘটনার উপলক্ষ। এসব দুর্ঘটনায় অকালে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ, পঙ্গুত্ববরণ করছে অসংখ্য মানুষ। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার। বলা চলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। মহাসড়কে ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা কি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য? সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাধারণত ফুটপাথ দখল, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং না থাকা এবং জেব্রা ক্রসিং গাড়িচালক কর্তৃক না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যান একই সঙ্গে চলাচল, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো এবং মহাসড়ক ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে যাওয়াই দায়ী। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ যানবাহনের মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রয়েছে ৩ লাখের বেশি। প্রায় ৪০ শতাংশ চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এরও একটা বড় অংশ দেয়া হয়েছে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া, শ্রমিক ইউনিয়নের দেয়া তালিকা ধরে। প্রায় আট লাখ যানবাহনের কোন প্রশিক্ষিত চালক নেই। এসব অসঙ্গতি রেখে নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা দুরূহ। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোন অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি। ফলে চালকদের সিংহভাগই ট্রাফিক আইন ভাল জানে না। সড়ক দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ। দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে, তার অধিকাংশই চলাচলের অযোগ্য। ফিটনেসবিহীন এসব গাড়িও দুর্ঘটনার কারণ হয়। অন্যদিকে মহাসড়কের কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে রাস্তার পাশের জায়গা সঙ্কুচিত করে ফেলা হয়েছে। প্রায় সব দুর্ঘটনার পর বলা হয়, বাসের চালক ও হেলপার পলাতক কিংবা তাদের গ্রেফতারে পুলিশী তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। অথচ দুর্ঘটনা আবারও ঘটে। তার মানে ঘাতক চালক আর গাড়ির চাকার গতির কাছে মানুষের জীবন যেন তুচ্ছ! চালক যদি দক্ষ না হয় তবে দুর্ঘটনা রোধ হওয়া সম্ভব কিভাবে? পাশাপাশি প্রশিক্ষিত চালক নিশ্চিত না হলে দুর্ঘটনাও কমবে না। মৃত্যু মানুষের স্বাভাবিক নিয়তি হলেও দুর্ঘনায় মৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার দায় সংশ্লিষ্টদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সড়ক পথের উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অনেক সাফল্যের কথা শোনা যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কী কাজে আসবে, যদি না মানুষের নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করা যায়! আমরা চাই, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং সড়ক পরিবহনসংশ্লিষ্ট সমস্যা ও অব্যবস্থাপনাগুলো খতিয়ে দেখে সেই অনুযায়ী সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। প্রায়শই সতর্ক বার্তা ও দায়ীদের শাস্তির কথা বলা হয়, অথচ সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবেÑ এটা হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়।
×