ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

জয় হত্যাচেষ্টা বিষয়ে তথ্য জানতে তদন্ত দল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ এপ্রিল ২০১৬

জয় হত্যাচেষ্টা বিষয়ে তথ্য জানতে তদন্ত দল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সদস্যের কাছ থেকে ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে জয়ের তথ্য-উপাত্ত কিনেছেন বাংলাদেশী এক সাংবাদিক। এই সাংবাদিক শফিক রেহমান-ই কিনা, তা জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এক ডিবি ডিসির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই সদস্যদের সঙ্গে ৪০ হাজার ইউএস ডলার ঘুষের লেনদেন চুক্তি করে ৩০ হাজার ডলার দেয়ার পর বাকি ১০ হাজার ডলার ঘুষ পরিশোধ না করায় জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার নেপথ্য কাহিনী বলে জানা গেছে। সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসা থেকে এফবিআইয়ের নথিপত্র জব্দ ও ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে তার বৈঠকে মিলিত হওয়ার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিএনপিসহ রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, ডিবির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে যেসব বিষয়ে খোঁজখবর নেবে তার মধ্যে রয়েছেÑ বাংলাদেশী রিজভী আহমেদ সিজারের এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের মামলার রায়ে ও আর্গুমেন্ট পেপার থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশ পাওয়ার বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্রের মামলার রায়ের পর ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে এ সংক্রান্ত চারটি পাবলিক ডক্যুমেন্ট রয়েছে, যাতে মামলায় পক্ষভুক্ত রয়েছে রিজভী আহমেদ, জোহানেস থ্যালার ও রবার্ট লাস্টিক। এছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্টের আদালতে আর্গুমেন্ট পেপার এবং বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়। রায়ে বাংলাদেশী রিজভী আহমেদ সিজারের যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দেয়ার মামলার রায় ও আর্গুমেন্ট পেপার থেকে দেখা যায় এক বাংলাদেশী সাংবাদিক ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে জয়ের ব্যাপারে এফবিআইয়ের তথ্য কিনেছেন। ডিবি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মামলার রায়ে ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে এ সংক্রান্ত যে চারটি পাবলিক ডক্যুমেন্ট রয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এক এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেয়ায় ২০১৫ সালে বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদকে তিন বছরের কারাদ- দেয় মার্কিন আদালত। রিজভী আহমেদ সিজার এফবিআই এজেন্ট লাস্টিকের কাছ থেকে এ তথ্য নেয়। ঘুষ লেনদেনের মধ্যস্থতা করেন থ্যালার। শেষের দু’জনকেও আদালত শাস্তি দিয়েছে। রিজভী আহমেদ বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের পুত্র। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের দলিল অনুযায়ী দুটি কারণে রিজভী আহমেদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপারে এফবিআইয়ের এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথমত রিজভী আহমেদ ওই সব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি জয়কে অপহরণ ও শারীরিক আঘাত করতে চেয়েছিলেন। রিজভী ৩০ হাজার ডলারে ওসব তথ্য বাংলাদেশী এক সাংবাদিকের কাছে বিক্রিও করেছিলেন। তবে সেই সাংবাদিকের নাম বা পরিচয় ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের দলিলে না থাকায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিবি সূত্রমতে, এফবিআই সদস্যদের ঘুষ দিয়ে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেÑ জয়ের ব্যাংক এ্যাকাউন্টের বিস্তারিত বিবরণ, তার ও পরিবারের অন্য সদস্যের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর, কাস্টমস, বর্ডার পেট্রোল এজেন্সি এবং এফবিআইয়ের যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য। এছাড়াও ছিল জয়ের ভার্জিনিয়ার বাড়ির ঠিকানা এবং আরও স্পর্শকাতর তথ্য কিছু। জয় তখন সপরিবারে বসবাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর লাস্টিক এবং থ্যালারের মধ্যকার টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, তারা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে রিজভী আহমেদের কাছ থেকে বড় অংকের ঘুষ নিয়েছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের প্রথমদিক পর্যন্ত জয়ের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য এবং রিজভীর এক রাজনৈতিক মিত্রকে মামলা থেকে বাঁচাতে লাস্টিক এবং থ্যালারকে এককালীন ৪০ হাজার ডলার দেয়ার কথা হয়। এছাড়া প্রতি মাসে ৩০ হাজার ডলার দেয়ার শর্তে তারা অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহে রাজি হয়। সিজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিএনপির কোন কোন নেতা জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিবির তদন্ত দলটি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে খোঁজখবর নেবে বলে জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানায়, ২০১২ সালের শেষনাগাদ রিজভী আহমেদের কাছে অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আরও অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন থ্যালার এবং লাস্টিক। এফবিআই সদস্যরা জানতে পারেন, তারা ছাড়াও রিজভী এবং তার সহযোগীরা অপর অন্যান্য এফবিআই গোয়েন্দার কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। সে সময় রিজভীর ওপর ক্ষুব্ধ হয় থ্যালার এবং লাস্টিক। তারা এতই ক্ষুব্ধ হয় যে, জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার যে তথ্য তারা সংগ্রহ করেছেন সেই তথ্য জয়ের কাছে বিক্রি করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। এভাবে তাদের কাছ থেকেই ফাঁস হতে থাকে জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনাটি। ডিবি এমনও তথ্য পায় যে, জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সদস্যদের সঙ্গে ঘুষের চুক্তি হয়েছিল ৪০ হাজার ইউএস ডলার। কিন্তু এফবিআই সদস্যদের ঘুষ দেয়া হয় ৩০ হাজার ডলার। অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত হাতে পাওয়ার পর বাদ বাকি ১০ হাজার পরিশোধ করেনি। ১০ হাজার ডলার পরিশোধ না করায় এফবিআই সদস্যদের সঙ্গে রিজভী আহমেদ সিজারের বিরোধ দেখা দেয়। আর এতেই জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ষড়যন্ত্রের প্লটটি ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয় এফবিআই সদস্যরাই। যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে ডিবির তদন্ত দল ॥ সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ষড়যন্ত্র মামলা তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তকারী দল। ডিবির উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। তদন্তকারী দলে অপর দুই সদস্য হলেনÑ গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ ও মামলার তদন্ত সিনিয়র সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত। ২০১৫ সালের ৩১ মে রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশ, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। ওই মামলাতেই শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শফিক রেহমানের পক্ষে কূটচাল শুরু ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের পর থেকে তার পক্ষ নিয়ে বিএনপি ও তার সমর্থক বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শুরু হয়েছে কূটচাল। গত ১৬ এপ্রিল শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর থেকেই ফেসবুকে বিএনপি ও তাদের সমর্থকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি বিএনপির পক্ষ থেকে এফবিআইকে চিঠি দিয়ে শফিক রেহমান সংক্রান্ত বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিক শফিক রেহমানের মামলা পরিচালনা ও তার পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে লিখে আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন এমন এক সাংবাদিক যিনি ব্রিটিশ নাগরিক তিনিও সাংবাদিক শফিক রেহমানের পক্ষে বিদেশী পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছেন।
×