ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হলমার্ক কেলেঙ্কারির তিন কর্মকর্তা এখনও পলাতক

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

হলমার্ক কেলেঙ্কারির তিন কর্মকর্তা এখনও পলাতক

নাজনীন আখতার ॥ হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জন এখনও পলাতক। অভিযুক্তদের মধ্যে এক কর্মকর্তা কারারুদ্ধ অবস্থায় মারা গেছেন। এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর ৩ কর্মকর্তা কারারুদ্ধ রয়েছেন। ৯ জনের বিরুদ্ধেই মানি স্যুট মামলা, বিভাগীয় মামলা, পদাবনতি, সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া চলছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গঠিত ২নং সাব কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটি প্রচলিত আইনে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকলে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই সাব কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, এ বি তাজুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভির মাহমুদ সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেন। একই শাখা থেকে আরও ২৬ বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে ভুয়া এলসি করে অস্তিত্বহীন ৪০ কোম্পানি হাতিয়ে নেয় আরও এক হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য এবি তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, যে পরিমাণ টাকা লোপাট হয়েছে তাতে অর্থ আদায় প্রক্রিয়া কতটুকু লাভজনক হবে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এরপরও আগামীতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করেছে সাব কমিটি। সেক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে যদি যথেষ্ট পরিমাণে শাস্তির ব্যবস্থা না নেয়া যায় তাহলে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কয়েকজন কারারুদ্ধ আছেন। কয়েকজন এখনও পলাতক। একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি বলেন, কমিটি যত দ্রুত সম্ভব ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াসহ অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে। সংসদীয় কমিটিতে দেয়া সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অভিযুক্ত ১০ কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জনের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অভিযুক্ত। শুধু সবিতা সিরাজের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার হওয়ায় এবং তার অনিয়ম তদন্তে গঠিত তদন্ত দলের প্রতিবেদনে কোন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়নি। তাছাড়া দুদকের চূড়ান্ত চার্জশীটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত না করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। এছাড়া সফিজ উদ্দীন আহমেদকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে নামিয়ে এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত আছেন। অর্থ আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। এজিএম এজাজ আহমেদ বর্তমানে কারারুদ্ধ। গত ৩০ নবেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এজিএম সাইফুল হাসান বর্তমানে পলাতক। তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। এজিএম কামরুল হোসেন খানও পলাতক। তাকে সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে নামিয়ে দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেরুন্নেছা মেরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল মতিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে পলাতক। ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একেএম আজিজুর রহমান (ঘটনার সময় ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখার প্রধান) জেলহাজতে থাকাকালে মারা যান। তিনি মারা যাওয়ায় তাকে ব্যাংকের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা সম্ভব না হওয়ায় তার চাকরিকালীন সকল পাওনা বাজেয়াফত করা হয় এবং তার মৃত্যুর পূর্ববর্তী সাময়িক বরখাস্তকাল বিনাবেতনে গণ্য করা হয়। তার পরিবারকে এ শাস্তির সিদ্ধান্ত অবহিত করে বিভাগীয় চার্জশীট মীমাংসা করা হয়েছে। এছাড়া হোটেল শেরাটন শাখায় ঘটা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত জেনারেল ম্যানেজার ননী গোপাল নাথ পলাতক আছেন। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা রয়েছে। জেনারেল ম্যানেজার মীর মহিদুর রহমান বতর্মানে কারারুদ্ধ। তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধেও মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে কারারুদ্ধ।
×