ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃতী নারী ক্রীড়াবিদদের বিএসপিএর সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

কৃতী নারী ক্রীড়াবিদদের বিএসপিএর সম্মাননা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির (বিএসপিএ) আয়োজনে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী ফাউন্ডেশন অদম্য নারী শিরোনামে নারী ক্রীড়াবিদের মিলনমেলা বসেছিলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অডিটরিয়ামে। শনিবার বিকাল চারটায় এক ছাদের নিচে মিলিত হয়েছিলেন দেশের সকল নারী কৃতী ক্রীড়াবিদ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী আসরে ২২ জন স্বর্ণপদক পাওয়া নারী ক্রীড়াবিদকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। তারা হলেন মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার), মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারোত্তোলন), শারমিন ফারজানা রুমি (তায়কোয়ান্দো), শাম্মী আক্তার (তায়কোয়ান্দো), মুন্নি খানম (কারাতে), জ উ প্রু (কারাতে), উসাইনু মারমা (কারাতে), মরিয়ম খাতুন (কারাতে), ইতি ইসলাম (উশু), শারমিন আক্তার রতœা (শূটিং), সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা (শূটিং), তৃপ্তি দত্ত (শূটিং), শারমিন আক্তার (শূটিং), ফৌজিয়া হুদা জুঁই (এ্যাথলেটিক্স), লাভলী চৌধুরী আঁখি (শূটিং), রহিমা খানম যুঁথি (এ্যাথলেটিক্স), সাবরিনা সুলতানা (শূটিং), কাজী শাহানা পারভীন (শূটিং), মোল্লা সাবিরা সুলতানা (ভারোত্তোলন) ও শাহরিয়া সুলতানা সুচি (ভারোত্তোলন)। এছাড়া ক্রীড়ায় বিশেষ অবদান রাখায় রানী হামিদকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধান অতিথি হিসেবে কৃতী নারী ক্রীড়াবিদদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। মন্ত্রী আশা করেন, বিএসপিএ তার এই উদ্যোগ আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত রাখবে। দেশের নারী ক্রীড়াবিদদের অগ্রগণ্য রানী হামিদ। যাকে সবাই দাবার রানী বলেই জানেন। সেই রানী হামিদ বিশেষ সম্মাননা পেয়ে দারুণ খুশী। তার কথায়, ‘খুব ভাল লাগছে। অদম্য নারীÑ এমন পুরস্কার পেয়ে খুব ভাল লাগছে। অনেককেই আজ দেখতে পেরেছি এই অনুষ্ঠানের কল্যাণে। তাই আমার মনটাও ভাল। বিদেশের মাটিতে লাল সবুজের পতাকা উড়ানো এই মেয়েদের দেখে আমি খুব আনন্দিত। ধীরে ধীরে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বেÑ এই প্রত্যাশাই করছি।’ বিকেএসপির উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ও জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সাবেক তারকা এ্যাথলেট শামীমা সাত্তার মিমোও উচ্ছ্বসিত এমন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে। তার কথায়, ‘খুব ভাল লাগছে এখানে এসে। কতদিন পর অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। অদম্য নারীÑ নামই বলে দিচ্ছে মেয়েদের জন্য কতটা মহতী উদ্যোগ। দেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটা মেয়েদের আরও ভাল ফল করতে উৎসাহ যোগাবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘সাঁতারে বিদেশী কোচ আসায় যেমন গতি বেড়েছে, তেমনি নেপাল এসএ গেমসের আগে অন্য ডিসিপ্লিনগুলোতেও বিদেশী কোচ আসলে গতি বাড়বে। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে প্রয়োজনে আমাদের দেশের কোচদের বিদেশেও পাঠানো উচিত। যাতে নিত্য নতুন নিয়ম কানুন রপ্ত করে তারা আমাদের ক্রীড়াবিদদের অনুশীলন করাতে পারেন।’ ১৯৯১ ও ’৯৯ সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী শূটার কাজী শাহানা পারভীন বলেন, ‘অদম্য নারী শিরোনাম শুনলেই স্পিড বেড়ে যায়। খুব ভাল লাগছে সম্মাননা পেয়ে।’ দেশের প্রথম স্বর্ণজয়ী নারী এই ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘আমাদের সময়ে অনেক মনযোগী ছিলাম। কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েদের মধ্যে সে রকমটা দেখা যায় না। তাছাড়া সময় দিতে পারি না বলে তেমন খোঁজ খবরও রাখি না বর্তমান শূটিয়ের। নতুনদের জন্য শুধু এটুকুই বলব, সাধনা কর, ফল পাবে।’ ১৯৯৩ ও ’৯৯ সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী শূটার সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘অদম্য নারী শব্দ দু’টাই ভাল লাগে। দেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে এটা ভাবতেই ভাল লাগে। তবে মাঝে সাঝে হতাশ হই যখন শূটিংয়ের মেয়েদের মধ্যে ইচ্ছাশক্তির অভাব দেখি। তাদের মধ্যে সাধনার ইচ্ছা কমে গেছে। আমাদের সময়ে ক্যাম্প বন্ধ থাকলে নিজেদের গুলি দিয়েই প্রশিক্ষণ করতাম। কিন্তু এখনকার মেয়েদের মধ্যে ভাবটা এমন, ক্যাম্প বন্ধ তো আমাদের অনুশীলনও বন্ধ- এমনটাই।’ ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী কারাতেকা জ উ প্রুর কথায়, ‘আমি বান্দরবানের বৈসাবী উৎসব রেখে এখানে এসেছি। অদম্য নারী- অনুষ্ঠানে এসে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। যদিও আমি এখন সংসারী। তবে এবারের গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিনটি না থাকায় আমিও হতাশ হয়েছি। হয়তো অংশও নিতে পারতাম। সেই সুযোগটি নষ্ট হয়েছে।’ গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে দু’টি স্বর্ণজয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার কথা, ‘স্বর্ণ জয়ের পর যেন সংবর্ধনায় ভাসছি। তবে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন ক্রীড়ালেখক সমিতির কাছ থেকে এমন সম্মাননা পেয়ে আমি গর্বিত। আশাকরি এই পুরস্কার আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’ স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বলেন, ‘স্বর্ণজয়ের পর আমার জীবনে আশাতীত পরিবর্তন এসেছে। তবে আগামীতে সাফল্য পেতে হলে আমাদের জিমন্যাশিয়াম আরও বড় করা প্রয়োজন।’
×