ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কেরানীগঞ্জে কাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৯ এপ্রিল ২০১৬

কেরানীগঞ্জে কাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দেশের সর্বপ্রথম কারাগার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক প্রায় ৮ হাজার বন্দীকে একদিনে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। উদ্বোধনের পর যে কোন দিন এসব বন্দীকে স্থনান্তর করা হবে। বন্দী স্থানান্তরের দিনটি অবশ্যই সাপ্তাহিক ছুটির দিন হবে। তবে বর্তমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মরত সকল কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে। শুক্রবার সকালে কারা অধিদফতরে ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে স্থাপিত নতুন কারাগারটির শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আইজি প্রিজন্স এসব কথা বলেন। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কারাগারটি উদ্বোধন করবেন বলে জানানো হয়। আইজি প্রিজন্স বলেন, পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হলে ঢাকা ও কেরানীগঞ্জে দুই জায়গার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে দুই কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাছে এমনিতেই যথেষ্ট সংখ্যক কারারক্ষী নেই। তাই একদিনে বন্দী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, বিচারাধীর বন্দীদের জন্য তৈরি কেরানীগঞ্জের এ কারাগারটিতে শুধু পুরুষ বন্দীকে রাখা হবে। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট আট হাজার বন্দী আটক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩শ’ নারী বন্দী রয়েছেন। আমরা উদ্বোধনের পর বন্দী স্থানান্তরের আগেই প্রাথমিকভাবে নারী বন্দীদের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেব। আর বাকি সকল বন্দীকে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে কেরানীগঞ্জে বর্তমান কারাগারটির পাশে আরেকটি মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি নির্মাণের পর উক্ত কারাগারে নারী বন্দীদের রাখা হবে। ফলে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে কিছুটা সমস্যা হবে বলেও তিনি স্বীকার করেন। সকল বন্দী একদিনে কেন স্থানান্তর করা হবে এর কারণ ব্যাখ্যা করে আইজি প্রিজন্স বলেন, একদিনে প্রায় ৮ হাজার বন্দী স্থানান্তর করতে হলে প্রতি ভ্যানে ৫০ জন করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ প্রিজনভ্যান দরকার। সারাদেশের ৬৮ কারাগারের সব প্রিজনভ্যান আনলেও সেই সংখ্যা হবে না। তারপরও আমরা একদিনেই বন্দীদের স্থানান্তর করব এবং সেটি অবশ্যই ছুটির দিনে হবে। তবে আমরা এপ্রিল মাসের মধ্যে কেরানীগঞ্জে যেতে চাই। যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভাল। সম্মেলনে কারাগারগুলোকে আরও প্রযুক্তিবান্ধব করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জনাব ইফতেখার বলেন, কারাগারে মোবাইল জ্যামার বসানো হয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সমস্যা না হলে কোন বন্দী মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন না। এছাড়া আদালত থেকে কারাগারে আসা বন্দীরা বিভিন্ন অবৈধ জিনিস নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করে। যা কারারক্ষীরা তাদের পরীক্ষা করে বের করেন। এ পদ্ধতি পরিবর্তন করে আধুনিকতা আনতে আমরা একটি নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রকল্প কেনার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজন্সের জন্য বন্দীর সঙ্গে আনা মালামাল পরীক্ষার জন্য ২টি লাগেজ স্ক্যানার ও বন্দীর শরীরের সঙ্গে অবৈধ কিছু রয়েছে কি না তা পরীক্ষার জন্য বডি স্ক্যানার কেনার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে মূল ঢাকা কারাগারটি ১৭ একর আয়তনের ওপর প্রতিষ্ঠিত, এর স্থলে নতুন কারাগারটি ৩১ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন কারাগারে যাওয়ার পর নিরাপত্তায় কোন সমস্যা হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইজি প্রিজন্স বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় অবশ্যই কারারক্ষী কম। তবে নিরাপত্তা রক্ষায় কোন প্রকার সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, ‘নতুন লোকবল চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে ওই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারারক্ষীসহ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে ইফতেখার বলেন, নতুন কারাগারে কারারক্ষীদের থাকার কোন সমস্যা হবে না। আমাদের সাড়ে ৭শ’ কারারক্ষী আছেন। এর মধ্যে সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন হাসপাতালে বন্দীদের পাহারার জন্য প্রায় আড়াইশ’ কারারক্ষীকে রাজধানীতেই নিয়মিত থাকতে হবে। বাকি ৫শ’ কারারক্ষীর থাকার ব্যবস্থা সেখানে কেরানীগঞ্জে রয়েছে। নতুন স্থানে গেলে প্রথম প্রথম কিছু সমস্যা হবেই, পরে আস্তে আস্তে তা ঠিক হয়ে যাবে। পুরনো কারাগারটির স্থলে কি হবে এ প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন্স বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের জমিতে বিনোদনের জন্য ভবিষ্যতে পার্ক, কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সুইমিং পুল, ব্যয়ামাগার ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী দফতরের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের পরামর্শক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স কর্নেল ফজলুল কবীর, ডিআইজি প্রিজন্স (হেডকোয়ার্টার) এ কে এম ফজলুল হক, ডিআইজি প্রিজন্স (বরিশাল) আলতাব হোসেন, এআইজি প্রিজন্স (এডমিন) আব্দুল্লাহ আল মামুন, এআইজি প্রিজন্স (ফাইন্যান্স) জহির উদ্দীন বাবর, এআইজি প্রিজন্স (ডেভেলপমেন্ট) সাজ্জাদ হোসেনসহ কারা উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×