ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষা নিয়ে নিরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৭ এপ্রিল ২০১৬

পরীক্ষা নিয়ে নিরীক্ষা

শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিদ্যার যে সংযোগ, তাতে পরীক্ষা নামক বিষয়টির সম্পর্ক গভীর। সারাবছর অর্পিত বিদ্যা খাতায় উগড়ে দেয়ার কাজটিই হচ্ছে পরীক্ষার মূল বিষয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানেই এক শ্রেণী থেকে আরেক শ্রেণীতে উন্নীত হওয়া। পরীক্ষা কারও জন্য হয়ে ওঠে আনন্দদায়ক, কারও জন্য বিষাদময়, বিভীষিকাও হয়ে ওঠে কারও কারও জন্য। সবটাই নির্ভর করে পড়াশোনার মানের ওপর। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের কাজটি শিক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে ফলাফল। সারাবছরের পড়াশোনার মাধ্যমে যে বিদ্যার্জন ঘটে। তবে শিক্ষার্থীরা আর যাই হোক, গিনিপিগ নয়। তাদের নিয়ে যখন তখন যা খুশি তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সমীচীন হতে পারে না। কোমলমনা শিক্ষার্থীর মনমানসিকতা অবলোকন না করে তাদের ওপর পড়াশোনার চাপ তৈরি করাটাও সঙ্গত নয়। বিদ্যা গ্রহণ বা অর্জন যদি স্বতঃস্ফূর্ত না হয়, তবে তাতে খুঁত থেকে যেতে বাধ্য। জ্ঞানের ভুবনে অবাধে বিচরণ করা গেলে একজন শিক্ষার্থী জ্ঞানের আলোয় নিজেকে করে তুলতে পারে আলোকিত। আর তার সেই আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়তে পারে সমাজের নানা কোণে, মানুষের মনে। ‘অন্ধজনে দেহ আলো’র সেই মহান বাণীটুকু ধারণ করে একজন শিক্ষার্থী তার অর্জিত জ্ঞান অন্যের মধ্যে সম্প্রসারিত করতে পারে। এই শিক্ষা সঞ্চারিত হয় পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য সামাজিক জীব হিসেবে মানবজীবনের বিকাশ সাধন। এসবই হচ্ছে ব্যাপকার্থে শিক্ষার অর্থ ও ধারণা। কিন্তু সীমিত অর্থে শিক্ষার অর্থ ও ধারণা ভিন্নতর। এই অর্থে শিক্ষা কেবল নির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম ও প্রাতিষ্ঠানিক একটি পুঁথিগত বিদ্যা, উন্নত ফল আর সনদ প্রাপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষার ত্রি-ধারার মধ্যে সর্বশেষ ধারাটিই হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আনুষ্ঠানিক শিক্ষা। যাকে বলা হয় বিধিবদ্ধ শিক্ষা, শিক্ষা মানে অন্তরের ভেতর থেকে জেগে ওঠা, চেতনায় জাগরণ, চেতনায় আলোর সন্ধান ও আলোর পথে যাত্রা। শিক্ষা মানে তো উন্নতি ও প্রগতির পথে হাঁটা, আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন দ্বারা নিজের, সমাজের ও মানবের কল্যাণ সাধন। শিক্ষা মানেই তো মানুষের মুক্তি। কিন্তু কোথায় সে শিক্ষা? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে প্রচলিত যে শিক্ষার ধারণা বা শিক্ষায় এ যেন শৃঙ্খলেই আবদ্ধ। তবে শিক্ষার নামে কেবল মানুষকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে অক্ষরজ্ঞান দিয়ে সাক্ষর বানিয়েই আত্মতৃপ্তি অনুভব করা হচ্ছে এই ভেবে যে, শিক্ষার হার বেড়েছে, নিরক্ষরতার হাত থেকে মানবমুক্তি ঘটেছে। কিন্তু প্রকৃত মানবমুক্তি তাতে ঘটে কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রকৃত শিক্ষাই পারে কেবল প্রকৃত মানবমুক্তি ঘটাতে। শিক্ষার চিরস্থায়ী ও সর্বজনীন কোন একক লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গড়ে ওঠেনি। কাল ও সমাজভেদে তাই শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভিন্নতা পেয়েছে। দেশে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গত ৭ বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে আসছে। এতে শিক্ষা বা শিক্ষার্থীর মধ্যে জাগরণ যাই ঘটুক, পুঁথিবিদ্যা দিয়ে জাগতিক কাজ করা সহজ হয় না। তদুপরি রয়েছে, পরীক্ষা প্রথা। যা একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানের মানদ- হিসেবে বিবেচিত হলেও পরীক্ষাই শেষ কথা নয়। এদেশে পরীক্ষা প্রথা শিক্ষার্থীর কাছে গুরুত্ববহ। এর ফলই তাকে জাগতিক সুযোগ-সুবিধা এনে দিতে পারে। মানসিক জাগরণ যাই হোক না কেন। দেশে পাবলিক পরীক্ষাগুলো দীর্ঘ সময় নিয়ে চলে। এভাবে পরীক্ষা শিক্ষার্থীর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়। যেমন এবারের এইচএসসি পরীক্ষা ৩ এপ্রিল শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০ জুন। এমন প্রলম্বিত ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পরীক্ষার সময় ৫-৬ দিনের মধ্যে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণটাই হবে বাস্তবসম্মত। নতুবা পরীক্ষা নিয়ে এই নিরীক্ষা হিতে বিপরীতও হতে পারে।
×